ঈদ উল-ফিতর হচ্ছে শুকরিয়া জ্ঞাপন ও আনন্দের দিন। এটি রমাদান মাসের পরিসমাপ্তি নির্দেশ করে। আর আমরা তখন আনন্দিত হই। কারণ আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) আমাদেরকে তাঁর নির্দেশ পালন করার তৌফিক দিয়েছেন। রমাদান মাসজুড়ে আমরা সিয়াম পালন করেছি, আর রমাদান শেষে আমরা অনুধাবন করছি আল্লাহর নির্দেশগুলো আমাদের জন্য উপকারী; আমাদের মঙ্গল সাধনই এসবের লক্ষ্য।
আল্লাহ আমাদের উপর কোনো বোঝা চাপিয়ে দিতে চান না; তিনি সিয়াম পালনের নিয়ম প্রদান করেছেন আমাদের উপকারের জন্যই। সিয়ামের মধ্যে ব্যক্তি ও সম্প্রদায় উভয়ের জন্য কল্যাণ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আধ্যাত্মিক, নৈতিক ও শারীরিক উপকার।
ঈদ উল-ফিত্রের একটি গভীর তাৎপর্য রয়েছে। এর উদ্দীপনা প্রকাশ পায় স্বতন্ত্র মূল্যবোধ ও গুণাবলীর মাঝেঃ
- ধন্যবাদজ্ঞাপন ও আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা
- আনন্দ-উল্লাস উপভোগ করা
- আল্লাহর প্রতি অনুগত থাকার মহাপুরস্কার গ্রহণ করা
- আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা
- গরীব ও অসহায় মানুষদের দেখাশোনা করা
ধন্যবাদজ্ঞাপন ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা
ঈদ উল-ফিত্র এমন একটি দিন যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় পবিত্র রমাদান মাসের সফল পরিসমাপ্তি। এটি একটি উৎসব যা দায়িত্ব ও নিষ্ঠার পরিসমাপ্তিকে তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলে। এটি আমাদের শিক্ষা দেয়, প্রকৃত সুখ হচ্ছে কর্তব্য সম্পাদন ও মহৎ উদ্দেশ্যে কোনো কিছু বিসর্জন দেয়ার ফলাফল।
আমাদের উচিত আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার প্রতি কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপন করা, কারণ তিনিই আমাদেরকে রমাদানে সিয়াম পালন, ভালো কাজ ও কুর’আন তিলাওয়াত করার প্রতি পথ প্রদর্শন করেছেন। আমাদের উচিত তাঁর প্রতি ধন্যবাদজ্ঞাপন করা, কারণ তিনি আমাদের সম্পদ দিয়েছেন যা থেকে আমরা যাকাত আল-ফিত্র ও অন্যান্য দান করেছি। আল্লাহ পবিত্র কুর’আনে বলেন,
আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুন আল্লাহ তা’আলার মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।
[আল-বাক্বারাহঃ ১৮৫]
আনন্দ-উল্লাস
ঈদ আমাদের আনন্দ; এটি আমাদের বার্ষিক উৎসব। রমাদান হচ্ছে সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছ থেকে একটি পরীক্ষা। এ মাস শেষে, আমরা অর্জন ও আল্লাহর নৈকট্যলাভের এক মহান অনুভূতি উপভোগ করি। এটি হচ্ছে আধ্যাত্মিক পরিপূর্ণতার আনন্দ।
ঈদ উল-ফিত্রের দিন হচ্ছে উদযাপনের দিন। এদিন অন্যকে অপমান কিংবা অপদস্ত করা উচিত নয়, কারণ তা আমাদের রমাদানের অর্জনকে খর্ব করে দিতে পারে। ঈদ উল-ফিত্র একটি যথাযোগ্য সুখ ও আনন্দের দিন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,
বল, আল্লাহর দয়া ও মেহেরবাণীতে। সুতরাং এরই প্রতি তাদের সন্তুষ্ট থাকা উচিৎ। এটিই উত্তম সে সমুদয় থেকে যা সঞ্চয় করছ।
[সূরা আল-ইউনুসঃ ৫৮]
আবূ হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
সিয়াম পালনকারীর জন্য দুটো বিশেষ আনন্দের মুহূর্ত রয়েছেঃ একটি হল ইফতারের সময়, আর দ্বিতীয়টি হল তার রবের সাথে সাক্ষাতের সময়।
[বুখারী ওমুসলিম]
তবে ঈদ উল-ফিত্র উদ্যাপনের ক্ষেত্রে আমাদের উচিত হালালের উপর অবিচল থেকে হারামকে এড়িয়ে আনন্দ উপভোগ করা।
মহা পুরস্কার
যারা রমাদানে সিয়াম পালনের সময় আল্লাহর প্রতি তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেছে, ঈদ উল-ফিতর তাদের জন্য একটি রহমতের দিন। জান্নাতে ঈদ উল-ফিত্রকে বলা হয় পুরস্কারের দিন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, যখন ঈদ উল-ফিত্রের দিন উপস্থিত হয়, তখন আল্লাহর ফেরেশতারা সমস্ত রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে বলতে থাকেঃ
হে মুসলমানরা! তোমাদের প্রভুর কাছে চলো, যিনি অতি দয়ালু, যিনি নেকি ও মঙ্গলের কথা বলেন এবং সেই মতো আমল করার তৌফিক দান করেন, আর এ জন্য বহু পুরস্কার দান করে থাকেন। তাঁর তরফ থেকে তোমাদের রাত্রে তারাবীহ পড়ার হুকুম করা হয়েছে, তাই তোমরা তারাবীহ পড়েছ, তোমাদের দিনে রোজা রাখার হুকুম করা হয়েছে, তাই তোমরা রোজা রেখেছ এবং প্রভুর আনুগত্য করেছ। সুতরাং চলো, নিজ নিজ পুরস্কার গ্রহণ করো।
[আত-তারারানী]
অতঃপর তারা যখন ঈদের নামাজ পড়া শেষ করে, তখন আল্লাহর এক ফেরেশতা ঘোষণা করেনঃ
শুনো, তোমাদের প্রভু তোমাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন। অতএব তোমরা কামিয়াবী ও সফলতার সাথে ঘরে ফিরে যাও। এই ঈদের দিনটি পুরস্কারের দিন। এই দিনকে ফেরেশতাদের জগতে (আসমানে) পুরস্কারের দিন বলা হয়ে থাকে।
[আত-তারারানী]
আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা
ঈদ উল-ফিত্র এমন একটি দিন যেদিন মুসলিমরা আরো বেশি আন্তরিক হয়ে ওঠে যখন তারা তাদের আত্মীয় ও বন্ধুদের বাড়িতে বেড়াতে যায়। এর মাধ্যমে তারা পরস্পর শুভেচ্ছা বিনিময় করে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে। আমাদের সকলের উচিত আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া কিংবা অন্ততপক্ষে তাদের ফোন করা। মুসলিম ভাই-বোনদের উচিত ‘ঈদ মুবারক’ কিংবা ‘আল্লাহ আপনার এবং আমাদের ভালো কাজগুলো কবুল করুক’ বলে পরস্পর শুভেচ্ছা বিনিময় করা।
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
"যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ বিচারের দিনে বিশ্বাস রাখে সে যেন আত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখে।"
[বুখারী ও মুসলিম]
গরীব ও অসহায় মানুষদের দেখাশোনা করা
আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) যদিও আমাদেরকে সারা বছর জুড়ে গরীব, অসহায় ও ইয়াতীমদের দেখাশোনা করার নির্দেশ দিয়েছেন, তবে ঈদ উল-ফিত্র ও ঈদ উল-আয্হার প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আল্লাহ এবং নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন উভয় ঈদে গরীব-অসহায়দের চাহিদা পূরণ করতে ফলে তাদের আর ভিক্ষা করার প্রয়োজন হবে না।
এটাই ঈদ উল-ফিত্রের উদ্দীপনা। তাই চলুন, এই উদ্দীপনাকে সব সময় আমাদের মাঝে ধরে রাখি। চলুন, আল্লাহ ও আমাদের পরস্পরের সাথে বন্ধনকে আরো দৃঢ় করি। চলুন, আরো বেশি একতাবদ্ধ হই এবং ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সাম্প্রদায়িকভাবে আরো বেশি বেশি ভালো কাজ করি।
নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, পাপ থেকে তওবাকারী এমন হয়ে যায় যেন সে পাপই করেনি। তাই আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন এবং তাঁর অনুগ্রহ ও পুরস্কার কামনা করুন।
সর্বশেষ, এখানে কিছু কৌশল সম্পর্কে উল্লেখ করা হলো যেগুলো আমাদেরকে ‘ঈদ উল-ফিত্রের উদ্দীপনা ধরে রাখতে সাহায্য করবেঃ
- ই’তিকাফ সম্পন্ন করার পূর্বে, আপনার ভাই-বোনদের ‘ঈদ মুবারক’ কিংবা ‘আল্লাহ আপনার এবং আমাদের ভালো কাজগুলো কবুল করুক’ বলে শুভেচ্ছা জানান।
- আপনার আত্মীয়-স্বজন ও আন্তরিক বন্ধুদের বাড়িতে বেড়াতে যান, আর যারা অনেক দূরে থাকে তাদের ফোন করুন।
- আপনার পরিবার ও সন্তানদের দেখাশুনা করুন এবং তাদের ঈদের আনন্দ উপভোগ করার সুযোগ দিন।
- আপনার মুসলিম ভাই-বোনদের সাথে দেখা করার জন্য ঈদ উদ্যাপন অনুষ্ঠানে যোগ দিন।
- সকল মুসলিম ভাই-বোনদের জন্য দু’আ করুন।
- হালাল উপায়ে ঈদ উদ্যাপন করার চেষ্টা করুন এবং হারাম থেকে দূরে থাকুন।
আল্লাহ আমাদের ভালো কাজগুলো কবুল করুক এবং তাঁর ক্ষমা ও রহমত দান করুক।
উৎসঃ aboutislam.net