রমাদান সিরিজ (পর্ব-৩): সাফল্যের পাঁচটি ধাপ

দ্বিতীয় পর্বঃ আপনার লক্ষ্য স্থির করেছেন তো

আমরা প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বে  রামাদানের লক্ষ্য কি হওয়া উচিত এবং কেমন হওয়া উচিত তা ব্যাখ্যা করেছি। এখন সময় হচ্ছে একটা প্যারাডাইম পরিবর্তন করার এবং লক্ষ্য অর্জনে মনোনিবেশ করার।

নিম্নে আপনাদের সামনে ৫ ধাপ এর একটা পদ্ধতি দেখানো হলো। যদি আপনি লেগে থাকতে পারেন তাহলে এই পদ্ধতি আপনার রামাদানকে জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়ে পরিণত করবে। ইনশাআল্লাহ ।

এই পদ্ধতিটির নাম হচ্ছে, ৫ S পদ্ধতি।

১. Seek Allah  বা আল্লাহকে খোজা:

পৃথিবীতে কোন কাজই আল্লাহর ইচ্ছা এবং সাহায্য ছাড়া সম্পন্ন করা সম্ভব না। প্রত্যেকটি কাজের জন্য আপনার নিয়্যতটিও গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু আপনি আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কোন কিছু করতে পারবেন না, তাই তাঁর কাছে সাহায্য চান, এবং তিনি আপনাকে সাহায্য করবেন। শুরুতেই এটি স্বীকার করে নিন যে, আপনি যতই চেষ্টা সাধনা করেন না কেন, আপনি আল্লাহর সাহায্যের মুখাপেক্ষী। এই স্বীকৃতি আল্লাহর কাছে আপনার মনের চাওয়া প্রকাশ করবে এবং তিনি আপনাকে খালি হাতে ফেরত দিবেন না।

২. Start বা শুরু করা:

আপনার লক্ষ্য অর্জনের জন্য রামাদান পর্যন্ত অপেক্ষা করার দরকার নাই, একবার যখন আপনি আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়েছেন তখন আপনার সাফল্য আর আপনার মধ্যে দ্বিধা ছাড়া অন্য কোন বাধা নেই। তাই এখন হচ্ছে আপনার মাঝে প্রেরণা সৃষ্টির সময়। কল্পনা করুন যে, আপনি চোরাবালির উপর দিয়ে হাটছেন, এতে আপনার হাটার গতি শ্লথ হয়ে গিয়েছে। এখন হঠাৎ করে চোরাবালি সরে গেলো, আপনি কি করবেন? নিশ্চিত আপনি আপনার গন্তব্যপানে দ্বিগুণ গতিতে ছুটবেন। একই ভাবে, রামাদান শুরু হওয়ার আগেই আপনার লক্ষ্য পানে ছুটলে আপনার একটা লাভ হবে, রামাদানে আপনি ফুলস্পীডে ছুটতে পারবেন। অন্যরা যখন রামাদানের প্রথম দিন মাত্র শুরু করবে, তখন আপনি অনেকদূর এগিয়ে যাবেন। রাসুল স. বলেনঃ

“আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় আমল হচ্ছে ধারাবাহিক এবং নিয়মিত আমল, হোক সেটি খুব অল্প।”

তাই অল্প অল্প করে শুরু করুন এবং নিয়মিত চালিয়ে যান, যাতে রামাদানে আপনার কর্মক্ষমতা সর্বোচ্চ হয়।

৩. System বা পদ্ধতি:

প্রত্যেকটা ব্যবসায়ের নিজস্ব কিছু পদ্ধতি থাকে যাতে করে তাদের ব্যবসার লাভ লোকসান ও সম্পাদিত কাজের হিসাব করা যায়। একইভাবে আপনারও এমন একটা পদ্ধতি থাকা উচিত যেটা দিয়ে আপনি আপনার লক্ষ্যে কতটুকু অটল রয়েছেন? প্রতিদিন আপনি কতটুকু উন্নতি করেছেন? আপনি কতটুকু কাজ সম্পাদন করেছেন? এই সমস্ত দিকগুলো হিসাব করতে পারেন।

প্রতিদিন আপনি মোহাসাবা করুন আর প্রতিদিনের রিপোর্ট রাখুন। আপনি গত সপ্তাহের সাথে এই সপ্তাহের রিপোর্ট তুলনা করুন। দেখুন আপনার মধ্যে কোন পরিবর্তন এসেছে কিনা?  যখনই আপনি জানতে পারবেন যে আপনি আপনার কোন একটা কাজ বাদ দিয়েছেন তখনই আপনার দ্বারা পূর্বনির্ধারিত কাজগুলো করা সম্ভব হবে। হতে পারে এই পদ্ধতিটা সঠিক না, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে আপনি কাজ করবেন। আমি নিজে একটা রিপোর্ট বই ব্যবহার করি, আর আপনার যদি প্রয়োজন হয় তাহলে আপনি একটা স্প্রেডশীট বানিয়ে নিতে পারেন। এটা খুব বেশি জটিল করার দরকার নেই, গুগল ডক, ওয়ান নোট অথবা এভারনোটে আপনি একটা স্প্রেডশীট বানাতে পারেন।

৪. Sahib বা সহযোগী:

সাহিব বা সহযোগী হচ্ছেন তিনি, যিনি আপনাকে আপনার লক্ষ্যার্জনে সহযোগিতা করবেন। বিশেষত তিনি হচ্ছেন এমন একজন ব্যক্তি যার উদ্দেশ্য হচ্ছে আপনাকে আপনার কাজে মগ্ন রাখা। আরেকটি শব্দ ব্যবহার করা যায়, সেটি হচ্ছে দায়িত্বশীল। তিনি হতে পারেন এমন ব্যক্তি যার সাথে আপনি তারাবীহর পরে দেখা করবেন। দুজনেই দুজনার সারাদিনের কাজগুলো মূল্যায়ন করবেন পারস্পরিকভাবে। আর নিজেদেরকে,  এই পর্যন্ত যে পদ্ধতিগুলো আপনার সামনে তোলা হলো, সেভাবে মূল্যায়ন করবেন। যখন অন্যরা গল্পে এবং আড্ডায় মত্ত, তখন আপনারা রামাদানকে কিভাবে আরো ফলপ্রসু করা যায় সে ব্যাপারে আলাপ করছেন। ছোট একটি সিদ্ধান্ত, কিন্তু পরিবর্তনটি বিশাল আর নাটকীয়।

৫. Sign বা স্বাক্ষর:

সর্বশেষ কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, আপনি আপনার লক্ষ্যগুলো একটি কাগজে লিখে নিন। আর নিচে আপনার একটা স্বাক্ষর সংযুক্ত করুন। এখানে আপনি আপনার সম্মতি জানান যে, আপনি এই রামাদানে আপনার লক্ষ্যগুলো অবশ্যই অর্জন করবেন। এই কাজটির একটি জাদুকরী প্রভাব আছে, আপনার অবচেতন মন আপনার ঐ কাজকে বাস্তবায়ন করার জন্য কাজ শুরু করে দেয়। এইভাবে সম্মতি দেওয়ার ফলে একটি জিনিস স্পষ্ট হয়ে যায়, আর তাহলো, এই লক্ষ্যগুলো আপনার এবং আপনাকেই এই লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে হবে। আর এই যে চুক্তিটি আপনি আপনার সাথে করেছেন সেটি আপনার সাহিবকে দেখান। তিনি আপনাকে মনে করিয়ে দিবেন এবং আপনাকে সহযোগিতা করবেন। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, চুক্তি নামাটি লিখিত হওয়ায় সেটি আল্লাহ তায়ালাও দেখবেন, এবং তাঁর সমস্ত ফেরেশতারা এই চুক্তির সাক্ষী থাকবে। এই কাজটি করে আপনি সে সমস্ত মানুষের কাতারে চলে যাবেন, যারা রামাদানের সময়টিকে ফলপ্রসু করার জন্য সবচেয়ে বেশি চেষ্টা করছে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সফল হওয়ার তৌফিক দান করুন।

Action Steps বা করণীয়:

১. পরিশুদ্ধ নিয়্যত করা।

২.আপনার লক্ষ্য অর্জনের জন্য আজকেই কাজ শুরু করে দিন।

৩.আপনার কাজগুলোর হিসাব নেওয়ার জন্য একটি রিপোর্টিং পদ্ধতি তৈরী করুন।

৪. একজন সহযোগী ঠিক করুন যিনি আপনাকে আপনার লক্ষ্য অর্জনে সহযোগিতা করবে।

৫. আপনার লক্ষসমুহ লিখে ফেলুন, এবং আপনার অফিস ও বাড়িতে সেটা টাঙ্গিয়ে দিন।

 

বি. দ্রঃ এই লেখাটি "প্রোডাক্টিভ মুসলিম" ওয়েবসাইট থেকে রূপান্তরিত।

চতুর্থ পর্বঃ সুন্দর একটি বছরের জন্য চমৎকার কিছু দোয়া

৫৬৬

বার পঠিত

করিম এলসাইয়েদ

করিম এল সাইয়েদ একজন কনসাল্টেন্ট, কর্পোরেট ট্রেইনার, পাব্লিক স্পিকার, ব্লগার এবং প্রাক্তন ইঞ্জিনিয়ার। তিনি TrailblazerUprising এর প্রতিষ্ঠাতা যেখানে কর্মরত মানুষজন কীভাবে প্রোডাক্টিভ হতে পারে, সমাজের চলমান অসঙ্গতিকে পেছনে ফেলে কীভাবে প্রোডাক্টিভ হওয়া যায় সেগুলো নিয়ে কাজ করে।