ইসলাম ও পাশ্চাত্যঃ পুনরায় মুখোমুখি? (পর্ব-৩)

দ্বিতীয় পর্বঃ ইসলাম ও পাশ্চাত্যঃ পুনরায় মুখোমুখি?

বর্তমান সময়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বৈষম্য সীমাহীন পর্যায়ে পৌছেছে। পশ্চিম ইউরোপের ফ্ল্যাটসমূহকে পরিবর্তিত করে বা পরিত্যক্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানকে পরিবর্তিত করে মসজিদ হিসেবে ব্যবহার করতে দেখা যাবে বহু জায়গায়। কিন্তু যখনই মুসলমানরা মিনার এবং গম্বুজ সমেত সত্যিকার একটা মসজিদ নির্মাণ করতে চেয়েছে, তখনই একটা আইনের যুদ্ধের সম্মুখীন হতে হয়েছে, তা  Lyon বা Essen যেখানেই হোক। হঠাৎ করেই দেখা যাবে যে, শহরের গুরুজনদের কাছে তুর্কী ধাঁচের মসজিদের মিনারের চেয়ে, বায়ু দূষণকারী ধোঁয়ার স্তম্ভও যেন অধিকতর সৌন্দর্যবর্ধক বা সহনীয় বলে মনে হতে শুরু করে। কেউ কেউ তো এমন তর্ক জুড়ে দেন যে, ইউরোপের প্রাণকেন্দ্রের পটভূমিতে মসজিদের উপস্থিতির ব্যাপারটাই বেনানান।(বসনিয়া থেকে সৌন্দর্য বোধের খাতিরেই কি পরিকল্পিতভাবে, একের পর এক মসজিদ ধ্বংস করে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হচ্ছে?)

মিনারের প্রতি মিটার উচ্চতার জন্য মুসলমানদের দর কষাকষি করতে হয়- কি অযৌক্তিক এবং হাস্যকর ব্যাপার-তাদের এমন কথাও দিতে হয় যে কোন মুয়াজ্জিন ঐ মিনার কখনও ব্যবহার করবেন না, যাতে পরিবেশের ও প্রতিবেশের শান্তি ও নীরবতা বিঘ্নিত না হয়। চার্চের ঘন্টা যে, যে কোন সময় বেজে উঠতে পারে, এমন কি ভোর রাত্রেও- তার সাথে আযানের ধ্বনির শান্তিভঙ্গের যুক্তি মোটেও সঙ্গতিপূর্ণ নয়। যেমনটি একটা ওলন্দাজ ব্যঙ্গচিত্রে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে- আল্লাহু আকবরের পরিবর্তে যদি নামাজের ডাক দিতে “bim-bam bim-bam” জাতীয় ধ্বনি প্রচার করা হতো, তবেই বুঝি তা অধিকতর গ্রহনযোগ্য হতো?

ইউরোপে, অবশিষ্ট ক্ষুদ্রাকার ইহুদি সম্প্রদায় যদি ধর্মীয় কারণে নিজেদের রীতি-নীতি অনুযায়ী পশু জবাই করতে চায়, তবে তাদের অতি অবশ্যই তার অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু যদি মুসলমানদের বিরাট জনগোষ্ঠীও হালাল মাংস সংগ্রহ করতে একই ধরণের সুযোগের আবেদন করে, তবে নানা রকম আইনের দোহাই দিয়ে তাদের অতি অবশ্য প্রত্যাখ্যান করা হয়।

বৈজ্ঞানিক মহলেও তেমনি একটা Double Standard বা দ্বৈত মাপকাঠি চালু আছে। বিশেষতঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, গত কয়েক দশক ধরে এমন অলিখিত নিয়ম চালু রয়েছে যে, যে কোন বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে, রাজনৈতিকভাবে যা কিছুকে সঠিক মনে করা হয়, তার সাথে সংগতিপূর্ণ হতে হবে। এভাবে একজন জীববিজ্ঞানী তার পেশাজীবনের সর্বনাশ ডেকে আনতে পারেন, যদি তিনি ভুলে Darwin এর বিবর্তন-তত্ত্বকে চ্যালেঞ্জ করেন বা তিনি যদি মেধার বংশানুক্রমিক দিকের উপর তার গবেষণাকে জোরদার করেন। একই ভাবে একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, তার পেশা জীবনে মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারেন, যদি তিনি আমেরিকার সাথে ইসরায়েলের কৌশলগত মিত্রতা এবং তা থেকে উদ্ভূত পক্ষপাতিত্বকে প্রশ্ন করেন।

এই সমস্ত “রাজনৈতিক ভাবে সঠিক এবং নিরাপদ”মানুষের কখনো “মৌলবাদী”বা “সেকেলে মূর্খ”বলে অভিযুক্ত করা হয় না—যদিওবা তাদের জনপ্রিয় (তথা গোঁড়া)দৃষ্টিভঙ্গী, কেবল মাত্র সনাতন অনুমান-ভিত্তিক বিধিনিষেধের উপর নির্ভর করে গঠিত হয়ে থাকে। অথচ একজন মুসলিম বিজ্ঞানী যদি এই ধারণা থেকে অগ্রসর হতে থাকেন যে, কিছু মূল্যবোধ (কোরআনের) চিরকালের জন্য প্রযোজ্য, তবে তাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টার উদ্ভব হবে।

রাজনৈতিক বিষয়সমূহের বেলায়, ভিন্ন ক্ষেত্রে যখন ভিন্ন মাপকাঠি প্রয়োগ করা হয়, তখন মুসলমানরা তিক্ত ও অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। নিরাশ হয়ে যাওয়া আরবরা তাই আন্তর্জাতিক (সম্পর্কের) আইনকে প্রায়ই, “blond and blue-eyed” বা “সোনালি চুল ও নীল চোখ” সম্পন্ন বলে আখ্যায়িত করে থাকে। সার্বজনীন বা বিশ্বজনীন নিয়ম যে আদতে সার্বজনীন নয়, এই সত্যটা যথাযথ বিরক্তি ও ঘৃণা সহকারে তারা এভাবে অন্যদের বোঝাতে চেষ্টা করে।

উদাহরণ স্বরুপ ধরুন, একটা দেশের সামরিক জান্তা, একজন খৃষ্টান মৌলবাদী অথচ নির্বাচিত রাজনৈতিক নেতার কাছে ক্ষমতা হস্তান্ত্র করতে অনিচ্ছুক (Haiti)। এ ক্ষেত্রে জাতিসমূহের সমন্বয়ে গঠিত তথাকথিত জাতি-পরিবার (জাতিসংঘ?)ঐ সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে একত্রিত হবে এবং গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত গোষ্ঠীর পক্ষাবলম্বন করে তারা ব্যাপারটাতে হস্তক্ষেপ করবে। অথচ একই ধরণের একটা নির্বাচনে যদি একটা মুসলিম “মৌলবাদী”দল জয়ী হয় (Algeria), তবে তাদের প্রতিক্রিয়া একদম ভিন্ন হতে পারে। এই ক্ষেত্রে জাতি-পরিবার কর্তৃক সামরিক জান্তাকে বরদাস্ত এমনকি সমর্থন করার সম্ভাবনাই বেশী-কারণ দুটো খল চরিত্রের ভিতর সামরিক জান্তাকে অপেক্ষাকৃত কম দুষ্ট বলে মনে হবে তাদের (বলা বাহুল্য যে, যে কোন মাত্রারই হোক না কেন, ইসলামই সব সময় তাদের কাছে নিকৃষ্ট)।

অথবা আমরা না হয় আরেকটা উদাহরণ বিবেচনা করি - ধরুন, একটা দেশ (ইরাক), তার প্রতিবেশী দেশকে (কুয়েত) সামরিক ভাবে দখল করে নিয়ে নিজের মানচিত্রে সংযোজনের চিন্তা ভাবনা করছে। এক্ষেত্রে জাতিসংঘ, NATO ইত্যাদি সংঘবদ্ধভাবে এবং প্রয়োজনে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে বিরাট সামরিক শক্তি নিয়ে দখলকৃত দেশকে পুনর্বাসিত করার লক্ষ্যে হস্তক্ষেপ করবে। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ঐ দুর্বল দেশের সীমারেখা নিশ্চিত করা হবে যদি না ঐ দেশটি Palestine বা Bosnia-র মত কোন তেল-সম্পদ বিহীন মুসলিম দেশ হয়।

সার্বরা কেবল যদি মুসলিম হতো, তবে বসনিয়া হার্যিগোভিনায় তারা যে জাতিগত নিধন চালিয়েছে এবং যে ধরণের যুদ্ধ-অপরাধ সংঘটিত করেছে, তার প্ররিপ্রেক্ষিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা যে সর্বাত্মক সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে তাদের ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিতো, সে সম্বন্ধে কি কারো সন্দেহের অবকাশ আছে? এটা কি কল্পনা করা যায় যে, একটা খৃষ্টান বসনিয়া যদি কোন মুসলিম সার্বিয়া কর্তৃক আক্রান্ত হতো, তবে বসনিয়ার বিরুদ্ধে অস্ত্রনিষেধাজ্ঞার মতো কোন শাস্তি প্রয়োগ করা হতো।

অথচ, চলুন আমরা উত্তর ইরাকে, বিচ্ছিন্নতাবাদী Kurdish Workers Party(PKK)-র ঘাঁটি ধ্বংস করতে, স্বল্পমেয়াদী তুর্কী অভিযানের কথা বিবেচনা করি। জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরাক তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয় এবং সে কারণেই ইরাকী ভূমি থেকে PKK-র পরিচালিত কর্মকান্ডের উপর তার কোন নিয়ন্ত্রণ ছিল না (অর্থাৎ ইরাকী ভূমি থেকে PKK তুরস্কে যে সমস্ত আক্রমণ চালাতো, সেগুলো ইরাক বন্ধ করতে পারেনি) আর এতেই ইরাকী ভূমিতে তুরস্কের অনুপ্রবেশ তথা সামরিক অভিযান আন্তর্জাতিক আইনে যুক্তিযুক্ত হয়ে যায়—শুধু তাই নয় তা বরং একটা “NATO সমস্যাও” হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু এই ঘটনা এমন সব মানুষ দ্বারা তীব্রভাবে সমালোচিত হয়, যারা একই ধরণের উদ্দেশ্যে দক্ষিণ লেবাননে স্থায়ীভাবে অবস্থানরত ইসরাইলী সৈন্যদের সমালোচনার কথা কখনো কল্পনাই করবেন না। অবশ্য এই উদাহরণে, তুরস্ককে একটা মুসলিম দেশ হিসেবেই গণ্য করেছেন ঐ সমালোচকেরা।


সম্ভাব্য ইসলামী রাষ্ট্রের চিন্তায়, ইউরোপীয় আতঙ্কের মূলে এরকম একটা অনুমান কাজ করে যে, ঐ ধরণের কোন রাষ্ট্র, ধর্মনিরপেক্ষতার ইউরোপীয় নীতিমালার সাথে কিছুতেই সংগতিপূর্ণ হবে না। এই ধরণের মূল্যায়ন আসলে সত্যতা বিবর্জিত; কেননা যেমনটি ১৮২৫-৩১ সালে Al Tahtawi অনুধাবন করেছিলেন।১২ সম্ভবতঃ ফ্রান্স ছাড়া, আর কোথাও সত্যিকার অর্থে ধর্মনিরপেক্ষতা মেনে চলা হয় না। বাকী সব পশ্চিমা দেশই খৃষ্টান-গণতন্ত্র বা খৃষ্টান-প্রজাতন্ত্র, আর তাও তা সে সব দেশের আইন সংবিধান অনুযায়ী।

উদাহরণ স্বরুপ, জার্মানীর সংবিধানে ঈশ্বর রয়েছেন। সেদেশে খৃষ্টান ছুটিসমূহ উদযাপিত হয়, আর রবিবার হচ্ছে সাপ্তাহিক বিশ্রাম দিবস। ঐ প্রজাতন্ত্রের চ্যান্সেলর ও প্রেসিডেন্ট বড়দিন উপলক্ষে জনগণের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দিয়ে থাকেন। সরকারী স্কুলে, সরকারী বেতনভোগী শিক্ষক কর্তৃক খৃষ্টান ধর্ম শিক্ষা দেয়া হয়ে থাকে। নব নির্বাচিত সৈনিকদের ঈশ্বরের নামে শপথ গ্রহণ করার আহবান জানানো হয়ে থাকে। Catholic Lutherean ও reformed গীর্জাসমূহ, তথা ইহুদী সম্প্রদায়ের উপাসনালয়সমূহের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আয়করের পাশাপাশি “Church Tax” সংগ্রহ করা হয়। গীর্জাসমূহের ঘন্টা বাজানোর অধিকার ভোগ করে থাকে আর “Blasphemy” বা ঈশ্বর-নিন্দা হচ্ছে আইনগত অপরাধ। নির্বাচনের প্রচারণার সময় Catholic bishop গণ কখনো কখনো, কাদের পক্ষে বা বিপক্ষে ভোট দিতে হবে সে ব্যাপারে উপদেশ দিয়ে থাকেন।

অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ বা আমেরিকার অবস্থাও অনুরূপ। ফ্রান্সে ধর্মনিপেক্ষতাই এক ধরণের ধর্মে রুপান্তরিত হয়েছে। একটা মুসলিম দেশ অবশ্য ফ্রান্সের ধাঁচের ধর্মনিরপেক্ষতাকে গ্রহণযোগ্য মনে করতে পারে। সেক্ষেত্রে একটা মুসলিম গণপ্রজাতন্ত্রও ধর্মনিরপেক্ষ হবে; এক্ষেত্রেও কাঠামোগত ভাবে ক্ষমতার তিনটি উৎস একে অপরের কাছ থেকে আলাদা থাকবে; অথচ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডে তারা একে অপরের সহায়ক হবে। সুতরাং “ধর্মনিরপেক্ষ”নয় বলে একটা ইসলামী রাষ্ট্রকে প্রত্যাখ্যান করাটা নির্ভেজাল শঠতা।”

এধরনের দ্বৈত মাপকাঠির বা “Double Standard”- এর দীর্ঘ মেয়াদী প্রভাব অত্যন্ত দুংখজনক। ইতিমধ্যেই অনেক তরুণ আরব ভাবতে শুরু করেছে যে, “মৌলবাদী”ইসলামী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়ে যেতে পারে, এই ভয়ে, পশ্চিমা গণতন্ত্রী দেশগুলো সত্যি সত্যি কখনো আরব দুনিয়ায় গণতন্ত্রের বিকাশ ঘটুক তা চায় না।

Menachim Begin বা Nelson Mandela এর মত এক কালের কথিত “সন্ত্রাসীরা”পরবর্তীতে উচ্চ মর্যাদায় আসীন গণতান্ত্রিক রাজনীতিবিদ হিসেবে গ্রহণযোগ্য হন, যদি না ঐ সমস্ত প্রাক্তন “সন্ত্রাসী”মুসলমান হন, অথবা এমনকি Abbasi Madani -র মত একজন তথাকথিত “মৌলবাদী”মুসলমান হন- এই দ্বৈত বিচারের ব্যাপারটাও উপরে আলোচিত পশ্চিমা মনোভাবের সঙ্গে সম্পূর্ণ সঙ্গতিপূর্ণ। তাদের মাঝে গণতন্ত্রের বিকাশ ঘটানোর যে সম্ভাবনা রয়েছে, সে দিকটা বিচার করেও Abbasi Madani-র মত মানুষকে সুযোগ দেয়া হয় না।

Catholic Opus Die সংস্থা, প্রয়াত ফরাসী Archbishop Lefebre-র প্রতিক্রিয়াশীল আন্দোলন, ইসরাইলী একত্রিকরণপন্থীগণ (Lubavitchers এবং অন্যান্যরা) ও নিউইয়র্ক এর Mair Kahane- র অনুসারীগণ, উত্তর আয়ারল্যান্ডে Catholic এং Protestant সন্ত্রাসীগণ অথবা দক্ষিণ আমেরিকার জঙ্গী Catholic Liberation Theologists- এদের কারো নামের সাথে “Fundamentalist” বা “মৌলবাদী”লেবেল এঁটে দেয়া হয় না। না, হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য ব্যবহৃত এই “মৌলবাদী”লেবেলটি, কেবল মুসলমানদের নাজেহাল করার জন্য সংরক্ষিত।

বসনিয়ায় হত্যাযজ্ঞ চলাকালীন সময়ে পশ্চিমা জগতের নির্বিকার এবং নিষ্ক্রিয় ভূমিকা দেখে, মুসলিম বিশ্বের অনেকেই যে অনুসিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন তা অধিকতর বিপদ জনক এক ইঙ্গিত বহন করেঃ ইউরোপীয়রা, ইউরোপের মাটিতে একটা মুসলিম রাষ্ট্র সহ্য করার চেয়ে বরং একটি গোটা মুসলিম জনসংখ্যার বাস্তব নিশ্চিহ্নকরণ এবং নিধন মেনে নিতে প্রস্তুত।

আমাদের বোকার স্বর্গে বসবাস করা উচিত নয়, বাস্তব সত্য হচ্ছে; ইসলামকে হেয় করতে পশ্চিমা মানসে লালিত বৈষম্যমূলক মনোভাব এতই প্রবল যে, যে কোন দিন পক্ষপাতিত্ব, ভীতি এবং নিজেদের উন্নততর মনে করার প্রবণতা থেকে একটি মুসলিম বিরোধী ধ্বংসযজ্ঞের সূচনা হতে পারে-যেমনটি ১৯৯৫ সালের ১৮ই মার্চ জার্মানিতে ঘটলোঃ Munich এর মসজিদ তথা ইসলামিক কেন্দ্রে মলোটোভ ককটেল ছোঁড়া হলো।


References

     Jostein Gaardner, Sofies Verden (Oslo: 1991).
     Salma al Khadra’ al Jayyusi, ed. The Legacy of Muslim Spain (Leiden and New York: 1992); Sigrid Hunker, Allahs Sonne ubr dem Abendland, Unser arabisches Erbe (Stuttgart: 1960).
     Rifa’ah al Tahtawi, Takhlis al Ibriz fi talkhis Bariz (Cairo: 1933).


সূত্রঃ বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি লিঃ প্রকাশিত “ইসলাম ২০০০” গ্রন্থ

প্রথম পর্বঃ ইসলাম ও পাশ্চাত্যঃ পুনরায় মুখোমুখি?

৪৯৩

বার পঠিত

মুরাদ উইলফ্রেড হফম্যান

মুরাদ উইলফ্রেড হফম্যান-এর জন্ম হয়েছিল ১৯৩১ সালের ৬ই জুলাই, জার্মানীর Aschaffenburg-এর এক ক্যাথলিক পরিবারে- যেখানে তিনি দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের বছরগুলো কাটিয়েছেন এবং “কৌশলগত বোমাবর্ষণ” তথা সামরিক দখলের অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষাজীবন শুরু হয় ১৯৫০ সালে, New York-এর Schenectady-তে Union Collage-এ ১৯৫৭ সালে Munich University থেকে আইনের পারদর্শিতার উপর একটা ডক্টরেট ডিগ্রী এবং বার-এর পরীক্ষার মাধ্যমে, তিনি জর্মান আইনের উপর তার প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার সমাপ্তি টানেন এর পর পর আমেরিকার আইনের উপর পড়াশোনা করতে গিয়ে, ১৯৬০ সালে তিনি প্রখ্যাত Harvard Law School থেকে মাস্টার্স ডিগ্রী লাভ করেন

১৯৬১-১৯৯৪ সময়কালে তিনি জার্মান পররাষ্ট্র বিভাগে কর্মরত ছিলেন এবং পারমাণবিক প্রতিরক্ষার বিষয়াবলীর একজন বিশেষজ্ঞ ছিলেন এছাড়াও তিনি Brussels-এ (১৯৮৩-৮৭)NATO- এর তথ্য পরিচালক হিসেবে, আলজেরিয়ায় (১৯৮৭-৯০) এবং মরোক্কোয় (১৯৯০-১৯৯৪) জার্মান রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন

১৯৮০ সালে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন, ১৯৮২-তে উমরাহ্ পালন করেন এবং ১৯৯২-তে তিনি হজ্ব করেন ১৯৮৫-তে তিনি Diary of a German Muslim-এর জার্মান সংস্করণ প্রকাশ করেন, যা কিনা আরবী, ইংরেজী ও ফরাসী ভাষায়ও পাওয়া যায়

১৯৯২ সালে তাঁর লেখা বই Islam the Alternative যখন জার্মান ভাষায় প্রকাশিত হয়, তখন গণ-মানুষ পর্যায়ে একটা হৈচৈ পড়ে যায় জার্মান গণ-মাধ্যম তথা সংসদে, বামপন্থী ও নারীবাদীরা তাকে “মৌলবাদী” বলে আখ্যায়িত করে তাঁর বিরুদ্ধে জঘন্য প্রচারণা ও আক্রমণ চালায় এই বইখানাও আরবী ও ইংরেজী ভাষায় পাওয়া যায় এছাড়া Voyage to Makkah বইখানির প্রকাশনা ১৯৯৬ সালের গোড়ার দিকে নির্ধারিত

তাঁর পরলোকগত প্রথম (আমেরিকান) স্ত্রীর পক্ষ থেকে, জনাব হফম্যান-এর একজন পুত্র সন্তান রয়েছে অবসর গ্রহণের পর, তিনি তাঁর তুর্কী স্ত্রীর সাথে ইস্তাম্বুল-এ বসবাস করছেন