এই প্রতীকের অধিকারীরা ২০১৩ সালের ৩ জুলাই সংঘটিত সেনা অভ্যুত্থানকারীদের আক্রমণে রাবেয়া আল-আদাবিয়া প্রাঙ্গণে শহীদ হয়।
মিশরের জনগণ তাদের বিশ্বাস, স্বাধীনতা, ভবিষ্যত এবং তাদের ভোটে নির্বাচিত মিশরের প্রথম প্রেসিডেণ্ট এর জন্য ২৮ জুন রাবেয়া আল-আদাবিয়া প্রাঙ্গণে বিশ্ব ইতিহাসের অভূতপূর্ব এক সম্মিলিত প্রতিরোধ শুরু করে। সেখানেই তারা প্রথমবারের মত চার আঙ্গুলের মাধ্যমে রাবেয়া প্রতীকটি ব্যবহার করা শুরু করে। এটি প্রথম কে আবিস্কার করে কিংবা কে প্রথম এই প্রতীকের ধারণা দেয় তা অজ্ঞাত।
যখন তাদেরকে দুই মাস পরে জিজ্ঞাসা করা হল এই প্রতীকের অর্থ কি তারা ব্যাখ্যা করলঃ এটি “রাবেয়া প্রতীক”। আরবী ভাষায় রাবেয়ার অর্থ চার বা চতুর্থ। এই প্রাঙ্গণের নামকরণ করা হয়েছে রাবেয়া আল-আদাবিয়ার নামে যিনি আল্লাহর একনিষ্ট বান্দাদের মধ্যে একজন আশীর্বাদপুষ্ট মহিলা। পরিবারের চতুর্থ সন্তান হওয়ার কারণে তাঁর নাম রাবেয়া রাখা হয়। আমরা এই প্রতীক ব্যবহারের মাধ্যমে তাঁর স্মৃতি লালন করি।
দ্বিতীয় যে কারণে এই প্রতীকটি গুরুত্ব বহন করে তা হল প্রকৃতপক্ষে জামাল আব্দুল নাছের, আনোয়ার সাদাত এবং হুসনি মোবারকের পর মুহাম্মদ মুরসি মিশরের চতুর্থ প্রেসিডেণ্ট ছিলেন। আমরা জনগণকে তাঁর প্রেসিডেন্সি স্মরণ করিয়ে দিতে এই প্রতীক ব্যবহার করি।
এছাড়াও যারা তাহরির স্কয়ারে সেনা অভ্যুত্থান সমর্থন করতে সমবেত হয়েছিল তারা দুই আঙ্গুলের সাহায্যে ভি চিহ্ন ব্যবহার করত। আমরা তাদের মত হতে পারি না। আমরা রাবেয়া চিহ্ন ব্যবহার করে তা ছড়িয়ে দিচ্ছি যাতে আমরা তাদের থেকে নিজেদের পৃথকভাবে উপস্থাপন করতে পারি।
যখন গণতন্ত্রপন্থী সমাবেশকারীরা ১৪ আগস্টের শুরুতে এই ব্যাখ্যা প্রদান করল তখন মিশরের সেনাবাহিনী ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যার উদ্দেশ্যে রাবেয়া আল-আদায়িয়ায় প্রবেশ করল। যারা এই প্রতীকের ব্যাখ্যা প্রদান করেছিল হয়ত তারাও শাহাদাত বরণ করেছে। মৃত্যুর পূর্বে শেষবারের মত এই প্রতীকটি প্রদর্শন করেছে এমন মানুষের ছবি এবং ভিডিও ফুটেজ এই ওয়েবসাইটে রয়েছে।
মিশরে গণহত্যার পর রাবেয়া প্রতীকটি তুলনামূলকভাবে অধিক পরিচিতি লাভ করে এবং তখন থেকে এটি সমগ্র মুসলিম বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। খুবই অল্প সময়ে এই প্রতীকটি সকল মতাদর্শের মুসলিমদের নিকট গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে এবং মিশরের হাজার হাজার সাধারণ জনগণের উপর সহিংস আচরণে নীরব সমর্থনদানকারী প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী সকল শ্রেণীর মানুষ এই প্রতীকটি গ্রহণ করে।
রাবেয়া প্রতীকটি বুঝানোর জন্য যে বিভিন্ন লোগো ডিজাইন করা হয়েছিল তার মধ্যে হলুদ ব্যাকগ্রাউণ্ডের উপর কালো হাতের ডিজাইনটি জনমনে অনেক বেশি আবেদন সৃষ্টি করে। জনগণ এটি সর্বত্র ব্যবহার করা শুরু করে। ডিজাইনটির ব্যাপারে একটি বিষয় উল্লেখযোগ্য যে এই লোগোর ডিজাইনাররা হলুদ রঙ্গটি জেরুজালেমের কুব্বাতুস সাখরা মসজিদের গম্বুজ নির্দেশ করতে এবং কালো রঙ্গটি কাবা শরীফ আবৃতকারী কালো কাপড়টি নির্দেশ করতে ব্যবহার করে।
রাবেয়ার শহীদদের আশীর্বাদে পরবর্তীতে রাবেয়া প্রতীকটি জাতীয় সীমানা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ল এবং বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতীকে পরিণত হল। এই ওয়েবসাইটে “রাবেয়া কি” এ প্রশ্নের যে সকল উত্তর পাওয়া যাচ্ছে তা বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের বিভিন্ন ব্যাখ্যার সংকলন।
আজও মুসলিম বুদ্ধিজীবী, চিন্তাবিদ, সাংবাদিক এবং সাধারণ জনগণ এই প্রতীককে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করে যাচ্ছে। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যে ইসলাম ও মুসলমানদের লক্ষ্য করে চলে আসা গণহত্যা, জুলুম এবং দীর্ঘদিনব্যাপী রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক অবদমনের প্রতিক্রিয়ায় রাবেয়া প্রতীকটি হচ্ছে পুনর্জাগরণের প্রতীক।
পশ্চিমা ধ্যান-ধারণা যেমন গণতন্ত্র, মানবাধিকার, স্বাধীনতা, সমতা এবং বাঁচার অধিকার এসব প্রায়ই দ্বিমুখী নীতিতে প্রয়োগ করা হয় যা ফিলিস্তীন, সিরিয়া, বসনিয়া এবং সর্বশেষ মিশরে আমরা লক্ষ্য করেছি। রাবেয়া প্রতীকের অনুপ্রেরণায় এইরকম ধ্যান-ধারণা ইসলামী নীতির ভিত্তিতে পুনর্ব্যাখ্যা করা হবে।
আল্লাহর সাহায্যে এই জাগরণ জাতি-বিশ্বাস নির্বেশেষে প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করবে যারা এই পৃথিবীতে ন্যায়বিচার, সমতা ও স্বাধীনতা চায়। অধিকার ও স্বাধীনতা লাভের জন্য প্রত্যেক ভাল প্রচেষ্টাকে সমর্থন জানানো একটি মানব শিষ্টাচারের লক্ষণ।
রাবেয়া প্রতীকটি এবং শহীদদের আশীর্বাদ মুসলিম জনগণ এবং জাতিকে পুনরায় ঐক্যবদ্ধ করছে যারা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের উপনিবেশদের দ্বারা নির্ধারিত সীমানার কারণে বিভক্ত ছিল। কোন দেশ, দল বা ব্যক্তি এই প্রতীককে কেবলমাত্র নিজের বলে দাবি করে না। তাই তারা শহীদদের খাতিরে আল্লাহ যে আশীর্বাদ মুসলিম উম্মাহ্র উপর অবতীর্ণ করেছে তা নষ্ট করা থেকে বিরত থাকে।
সূত্রঃ http://www.r4bia.com/