রুয়ান্ডায় ইউরোপীয় শাসন চলছিলো। বেলজিয়ান ঔপনিবেশিক শাসকবৃন্দ স্থানীয় জনগণকে ঠেসে রাখবার এক মোক্ষম পন্থা অবলম্বন করেন। তা হলো, নতুন নতুন জাতিগত বিভক্তি তৈরি।
রুয়ান্ডার জনগণ কে কোন ‘জাতি’র অন্তর্ভুক্ত, তা ঠিক করা হলো জনগণের উচ্চতা আর চামড়ার রঙ দেখে। বেলজিয়ান শাসকবৃন্দের উদ্দেশ্য ছিলো, যেন জনগণের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক সর্বদা খারাপ থাকে, ফলশ্রুতিতে তাদেরকে নিজেদের আজ্ঞাবহ দাস বানিয়ে রাখা যায়। ‘হুতু’ এবং ‘তুতসি’ নামক গোষ্ঠীর জন্য সম্পূর্ণ বানোয়াট ইতিহাসের আঞ্জাম দেয়া হলো। এমনকি বানোয়াট বংশবৃত্তান্তও হাজির করা হলো। অথচ এই ‘হুতু’ আর ‘তুতসি’ নামগুলোই জোগাড় করা হয়েছিলো রুয়ান্ডার ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে থেকে, যার কোনো অর্থই ছিলো না শত শত বছর যাবত!
এই Divide-and-Conquer নীতিই জন্ম দেয় ১৯৯৪ সালের ‘রুয়ান্ডা গণহত্যা’র যা বিশ্ববিবেককে হতবাক করে দিয়েছিলো। যা রক্তের বন্যা বইয়ে দিয়েছিলো, জীবন কেড়ে নিয়েছিলো ৮ লক্ষ মানুষের। হুতু আর তুতসি গোষ্ঠীদ্বয় বানোয়াট ইতিহাসের উপর ভিত্তি করে ধরেই নিয়েছিলো, সেই আদিকাল থেকেই তাদের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব চলে আসছে।
ইদানীং বেশ শোনা যাচ্ছে শিয়া-সুন্নীর ‘১৪০০ বছরের যুদ্ধ’র কথা। এই বয়ান অনুযায়ী, দুই গোষ্ঠীর বর্তমানের সহিংসতা আসলে সেই ৭ম শতাব্দী থেকে শুরু হওয়া দ্বন্দ্বের ফল। কিছু মুসলিম এই দৃষ্টিকোণকে গ্রহণ করেও নিয়েছেন। তবে এটা বলা যথেষ্ট যে, ইতিহাসকে ভুলভাবে পড়া, এমনকি ইতিহাস জালিয়াতির মাধ্যমেই এহেন দৃষ্টিকোণ সৃষ্টি হয়েছে। হ্যাঁ, এটা সত্য যে ধর্মতাত্ত্বিক দিক থেকে শিয়া-সুন্নী পরস্পরের স্পষ্ট কিছু পার্থক্য আছে। কিন্তু উভয় গোষ্ঠী যে সর্বদা সংঘাত, বিদ্বেষ, যুদ্ধ ইত্যাদির মাঝে লিপ্ত ছিলো, এটা অবাস্তব একটা দাবী।
আর, এই ধর্মতাত্ত্বিক পার্থক্যের সাথে মধ্যপ্রাচ্যের শিয়া-সুন্নী লড়াইয়ের সম্পর্ক অতি অল্প। বলতে গেলে, কোনো সম্পর্কই নেই। বরং সম্পর্কটা Modern Identity Politics-এর সাথেই অধিক জড়িত। রুয়ান্ডার মতো মধ্যপ্রাচ্যেও বিভাজন বাড়াতে চায় পাশ্চাত্য শক্তি আর তার স্থানীয় দোসররা। উদ্দেশ্য, যাতে সংঘাত স্থায়ী হয়, এবং এমন এক মধ্যপ্রাচ্য তৈরি হয়, যা আর কোনো দিন ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না।
মিথ্যার ধারাবাহিকতা
মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান শিয়া-সুন্নী সংঘর্ষের মূল খুঁজতে যে গবেষণাগুলো হয়েছে, সেগুলোর মাঝে শিয়া-সুন্নী ঐতিহাসিক বিভক্তির প্রতি বেশ নজর দিতে দেখা যায়। বলা হয়, এ বিভেদগুলোই বর্তমান দ্বন্দ্বের মূল চালিকাশক্তি। এসব গবেষণার বয়ানে, ৬৮০ খ্রিস্টাব্দে কারবালার প্রান্তরে নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বংশধরদের (যাদেরকে শিয়া মুসলিমরা বিশেষ সম্মানের চোখে দেখেন) হত্যাকান্ডের মাধ্যমেই শুরু হয় এই ধারাবাহিক দ্বন্দ্ব প্রক্রিয়া। যা আজো সিরিয়া, লেবানন এবং মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশে চলে আসছে।
সাউদী লেখক আবদুল্লাহ হামিদাদ্দীন বলছিলেন, তুরস্ক আর ইইউ-এর বর্তমান দ্বন্দ্বের মূল কারণ হিসেবে রাজা চার্লস ও বাইজান্টিয়ামের সম্রাজ্ঞীর প্রাচীন দ্বন্দ্বকে তুলে ধরা যেমন অবাস্তব, সাম্প্রতিক ঘটনাবলির উপরিউক্ত বিশ্লেষণও তেমন অবান্তর। ৯ম শতাব্দীর ইউরোপীয় শক্তিসমূহের দ্বন্দ্ব বিচার করে বর্তমান শতাব্দীর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতাসমূহের বিশ্লেষণ করা সম্ভব, এমনটা ভাবা নেহায়েত হাস্যকর। যদিও এই পদ্ধতির বিশ্লেষণই মুসলিম বিশ্বের সংঘর্ষ আলোচনায় ব্যবহৃত হচ্ছে।
বর্তমানের এই রাজনৈতিক অংশগুলো প্রায়শঃই ধর্মীয় মতবিরোধকে টেনে আনেন, সাথে ব্যবহার করেন বিভিন্ন উপমা, আলংকারিক বাক্য ইত্যাদি (রাজনৈতিক সুবিধাবাদীরাও এহেন পন্থা অবলম্বন করেন)। সেগুলো সুদূর এক অতীতের কথা বলে ঠিকই, কিন্তু অতীত আর বর্তমানের যে ইতিহাসের ধারা চলে এসেছে, তা থেকে ভিন্ন চিত্র পেশ করে। তবে যা-ই হোক, মুসলিম বিশ্বের মাঝেও ঐতিহাসিক ঘটনাসমূহের এসব ব্যাখ্যা ছড়িয়ে পড়েছে, আর তার আঞ্জাম দিচ্ছেন কিছু ধর্মীয় ভাড়াটে বক্তা। বেশ খরচ করা হচ্ছে তাদের পেছনে।
মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসের উপর এক নজর
রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য নির্লজ্জভাবে যারা ইতিহাসের বিকৃত বয়ান খুঁজে বেড়াচ্ছেন, তাদের সামনে মধ্যপ্রাচ্যের আন্তঃগোষ্ঠীয় সম্পর্কের কিছু বাস্তবতা তুলে ধরা যায়। হাজার বছর যাবত বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর মাঝে সম্পর্কের উত্থান-পতন হয়েছে। কিন্তু ইতিহাস বলে, সংঘাত ও শত্রুতা থেকে বহুমুখীতা, সহিষ্ণুতা ও একত্রে বাসের রেকর্ডই বেশী।
শত শত বছর সুন্নী-শিয়া (সাথে সাথে খ্রিস্টান, ইহুদী ও অন্যান্য ধর্মীয় গোষ্ঠী) একত্রে এমন অন্তরঙ্গতায় বসবাস করেছে, পৃথিবীর অন্যান্য স্থানে যা নজীরবিহীন। এমনকি বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক কাঠামোতে তারা যে ক্ষমতা প্রয়োগ করেছে, তা যে সংঘর্ষতুল্য ছিলো, এমন যুক্তি পেশও নাকচ করে দেয়া যায়। সুন্নী উসমানীয় সাম্রাজ্য আর শিয়া সাফাভী সাম্রাজ্য পরস্পর দ্বন্দ্বে লিপ্ত ছিলো। কিন্তু তবুও তারা শান্তিপূর্ণভাবেই সহাবস্থান করেছে বছরের পর বছর। এমনকি মুসলিম শক্তিগুলোর মাঝে সংঘর্ষ বাধাকে লজ্জাকর হিসেবেও গণ্য করা হয়েছিলো।
আরো বলতে গেলে, দলকানা-ধর্মান্ধদের পক্ষ থেকে ধর্মীয় উত্তেজনা তৈরি সত্ত্বেও ফিরকা (তথা, মুসলিমদের অন্তঃধর্মীয় গোষ্ঠী, যেমন শিয়া-সুন্নী)-গুলো খুব কমই আড়ালে-আবডালে মুখ লুকিয়ে থাকতো। বরং এটাই দেখা গিয়েছে যে, শিয়া-সুন্নী আলেমগণ প্রায়শঃই পারস্পরিক আলোচনায় অংশ নিয়েছেন, এবং শত শত বছর পরস্পরকে প্রভাবিত করে এসেছেন। এহেন আলোচনায় অংশগ্রহণ দুই গোষ্ঠীর মধ্যকার আপাতঃ-ভিন্নতাকে ক্রমশই কমিয়ে এনেছে। এই যাত্রায় দেখা যায়, বর্তমানে সুন্নী ধর্মতত্ত্ব শিক্ষার সবচেয়ে বড় প্রাণকেন্দ্রে শিয়া ধর্মতত্ত্বও শিক্ষা দেয়া হয়।
অন্ধকারময় বর্তমান যুগ
অত্র ইতিহাস, এবং ইউরোপের ধর্মের নামে অযৌক্তিক ও নৃশংস যুদ্ধের ইতিহাসের মাঝে পার্থক্য অত্যন্ত ব্যাপক। পাশ্চাত্যের গবেষকবৃন্দ (এবং বর্ধমান অনেক মুসলিম গবেষকও) মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান গোষ্ঠীগত ঝামেলাগুলোকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এক ধরণের ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণের আশ্রয় নিয়েছেন। সে দৃষ্টিকোণের উৎপত্তি পাশ্চাত্যের যত অনিয়ন্ত্রিত ধর্মীয় সংঘাতের মধ্য থেকে। সুদূর অতীতের কথা বাদ দিলেও, ইউরোপের ধর্মকেন্দ্রীক বিদ্বেষের নিকৃষ্টতম নজীর দেখা যায় ক’দশক পূর্বের ‘হলোকস্ট’-এর মাধ্যমে। সম্ভবত এই ‘হলোকস্ট’ই ছিলো যুগ যুগ ধরে অত্যাচারিত ইউরোপীয় ইহুদীদের উপর চালানো চূড়ান্ত ‘সাম্প্রদায়িক সহিংসতা’।
অবশ্য সম্প্রতি কয়েক দশকে এ অবস্থা বেশ বদলেছে। ইউরোপে সাম্প্রদায়িক সহিষ্ণুতা ছড়ানোর ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের এককালের ধর্মীয় বহুমুখীতার অপ্রতিদ্বন্দ্বী চিত্র আজ ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। এতটাই অবনতি ঘটছে যে, একই ধর্মের অনুসারী হওয়া সত্ত্বেও সামান্য ভিন্নতার কারণে পরস্পর দাঙ্গা-হাঙ্গামায় জড়িয়ে পড়ছে গোষ্ঠীগুলো। ইউরোপীয় নেতৃবৃন্দ এখন নিয়মিতভাবে মধ্যপ্রাচ্যে ‘সংখ্যালঘু অধিকার সংরক্ষণ’-এর ব্যাপারে বয়ান দিচ্ছেন। তাদের এহেন বয়ান প্রদানকে বর্তমানে হয়তো মানা যেতে পারে; কিন্তু ইতিহাসের আলোকে একে অযৌক্তিক কর্ম বলে গণ্য করা যায়। কারণ?
সমসাময়িক মুসলিম সমাজসমূহ যখন এতটাই পিছিয়ে পড়েছে যে ইউরোপীয়রা তাদের উপর ধর্মগত বৈচিত্র্যের উপর বয়ান ঝাড়ার নৈতিক কর্তৃত্ব দাবী করতে সক্ষম হয়েছে, এসময়ে ইতিহাসের দিকে একবার তাকানো যেতে পারে। ইতিহাস বলে, ইসলামী দুনিয়ার সর্বোত্তম ধর্মীয় সহিষ্ণুতার সময়টা ছিলো মুসলিম সাম্রাজ্যসমূহের চূড়ান্ত রাজত্বের সময়কালেই। আধুনিক বিভিন্ন নেতা ও ধর্মীয় ব্যক্তিবর্গ, যাদের অনেকেই সংখ্যালঘুদের চরম তাচ্ছিল্য করেন, তাদের জন্য এসব ঘটনায় সে শিক্ষাই আছে যা তারা অবহেলা করে আসছিলেন।
ভয়াবহ কল্পকথা
অজ্ঞের মতো যারা বলে থাকেন যে, কঠোরভাবে মতাদর্শিক শুদ্ধিকরণ করেই অবস্থার উন্নতি সম্ভব, তাদের উচিত অতীত থেকে শিক্ষা নেয়া এবং ধর্মীয় উগ্র জাতীয়তাবাদের বীজ বপনের ইচ্ছা থেকে নিজেদের বিরত রাখা। যে সংঘর্ষটা বর্তমানে শিয়া-সুন্নীর মধ্যে আছে বলে অনেকে দাবী করেন, তা অতি সাম্প্রতিক কিছু আন্তর্জাতিক ঘটনার ফল। ১৯৭৯ সালের ইরান বিপ্লব এবং তার জবাবে বিশ্বব্যাপী পেট্রো-ডলারে চালিত ওহাবী প্রতিক্রিয়াশীলদের মধ্যকার আঘাত-পাল্টা আঘাত থেকে এই আন্তর্জাতিক ঘটনাগুলোর সৃষ্টি।
সন্দেহাতীতভাবে এ সংঘর্ষ কোনো ‘১৪০০ বছর ধরে চলা শিয়া-সুন্নী যুদ্ধ’র ধারাবাহিকতায় ঘটা কিছু নয়। বরঞ্চ অতি সম্প্রতি সৃষ্ট Identity Politics দ্বারাই এ সংঘর্ষ চালিত। সংঘর্ষরত উভয় গোষ্ঠীই রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে মিথ্যা ইতিহাস তৈরি করেছে এবং বিভিন্ন প্রতীক, অনুষ্ঠান তৈরি করেছে, যা ইতিহাসের দিকে নজর দেয়ায় ঠিকই, কিন্তু আসলে সেগুলো সম্পূর্ণ নব-উদ্ভাবিত বিষয়। পাশ্চাত্য সামরিক শক্তিগুলো চেয়েছে এ বিভক্তিগুলোকে বাড়াতে যাতে মুসলিম সমাজসমূহের মধ্যে মারাত্মক সংঘর্ষ তৈরি হয় এবং রক্তের বন্যা বইয়ে দেয়া যায়, যা পাশ্চাত্যেরই স্বার্থ সিদ্ধি করবে।
নয়া-রক্ষণশীলেরা যখন মুসলিমদের পরস্পর ভ্রাতৃহত্যার আগাম ধারণায় আনন্দে উৎফুল্ল হচ্ছেন, রাজনীতির বাইরের সাধারণ জনগণ কিন্তু ইসলামী বিশ্বসভ্যতার সেই ঐতিহ্যবাহী সহিষ্ণুতার ধারা বজায় রেখেই বসবাস করছে। প্রত্যেক ফিরকাগত সন্ত্রাসী-চরমপন্থীর মোকাবেলায় অসংখ্য শিয়া ও সুন্নী মুসলিম আছেন সারাবিশ্বে, যারা তাদের ধর্মের ভাই ও নিজ সমাজের সংখ্যালঘু রক্ষার্থে নিজের জীবনকেও ঝুঁকির সম্মুখীন করেছেন। এমন অনেক ঘটনা আছে, যেগুলো বর্তমানের সংঘাতকে তার সূক্ষ্ম তারতম্য খারিজ করে দিয়ে ফিরকাগত সহিংসতার সাথে মিলিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু এই প্রত্যেকটা ঘটনার মোকাবেলায় এমন ঘটনাও আছে, যা সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে সচেতনভাবে অঙ্গুলিনির্দেশ করে। এক ৮০-বছর বয়স্ক পাকিস্তানি বৃদ্ধ কৃষক, যার বয়স তার দেশের চেয়েও বেশী, বলছিলেন: “আমার শৈশবকাল থেকে শিয়া-সুন্নী ভ্রাতৃত্ব দেখে আসছি। বলতে পারেন যেদিন জন্মেছি সেদিন থেকেই দেখে আসছি।”
রুয়ান্ডায় একটা বানোয়াট ইতিহাসে বিশ্বাস করে উন্মাদনা আর আত্মবিধ্বংসী পথে অগ্রসর হয়েছিলেন একদল মানুষ। আজ রুয়ান্ডা সরকার ‘হুতু’ ও ‘তুতসি’ নামক কৃত্রিম শ্রেণীবিভাগকে সম্পূর্ণ নাকচ করে দিয়েছে এবং রুয়ান্ডার সকল নাগরিককে এক জাতিগোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। একইভাবে, মুসলিমদের কর্তব্য ‘নিজেদের মধ্যেকার ১৪০০ বছরের যুদ্ধ’র নামে চালানো কল্পকথা বর্জন করা এবং এহেন বিশ্বাসের ভয়াবহ অজ্ঞতার দিকটা বোঝা।
একদম সহজ সত্য বলতে, যদি এমন কোনো ‘১৪০০ বছরের যুদ্ধ’ থাকতোই, শিয়া সুন্নীর মাঝে বৈবাহিক সম্পর্কের ঘটনা এবং একবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত পাশাপাশি বসবাসের নজীর মিলতো না। আরো বলতে, তারা যদি পরস্পর আসলেই শত্রু হতো, হজ্বের সময়ে লক্ষ লক্ষ মুসলিমের একই স্থানে শান্তিপূর্ণভাবে একত্রিত হওয়াও বন্ধ হয়ে যেতো কয়েক শত বছর আগে। ইসলাম যদি একটা গঠনমূলক সামাজিক প্রক্রিয়া হিসেবে চলতে চায়, তবে আধুনিক মতাদর্শসমূহের ‘ঐতিহাসিক সত্য’র ছদ্মবেশে বিভ্রান্ত হয়ে এ ঐতিহ্যবাহী সম্পর্ক ও জীবনধারা যেন ধ্বংস হয়ে না যায়।
সূত্রঃ আল-জাজিরা