রামাদানের তিরিশ দিন হয়তো একজন মুসলিমের জীবন পরিবর্তনকারী হতে পারে। যদি আপনার জানা থাকে যে আপনার আসলেই কি করা উচিত। এই পাঁচ কিস্তির লেখায় আপনি আশা করি একটি প্রোডাক্টিভ রামাদান কিভাবে পেতে পারেন তার একটা দিকনির্দেশনা পাবেন। আজকের পোস্টে আপনাদেরকে রামাদানের প্রস্তুতি সম্পর্কে বলবো। এবং রামাদানের প্রস্তুতি নেয়ার গুরুত্ব সম্পর্কেও হয়তো আপনাদের ব্যাখ্যা করতে পারবো।
রামাদান , এই বছরের সবচেয়ে ফলপ্রসু সময় হতে পারে, আমাদের শুধু চাবিটা খুঁজে নিতে হবে। একটু পর্যালোচনা করি, প্রিয়নবী স. বলেছেন, “যদি এই মাসে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য কেউ একটি ভালো কাজ/ নেক আমল করে তবে তা বছরের অন্য যেকোন সময় ফরজ আদায়ের সমান পুরস্কার পাবে, আর যদি কেউ এই মাসে ফরজ আদায় করে তাহলে বছরের অন্য সময়ে ৭০ টি ফরজ আদায়ের সমান পুরস্কার পাবে।” [ ইবনে খুযায়মা এবং বায়হাক্কী]
চিন্তা করে দেখুন, যে কাজ আপনি অন্য সময়ে করেন, সেই একই কাজ এই মাসে করার ফলে আপনি ৭০ গুণ বেশি সওয়াব পাচ্ছেন। আবার রাসুলের স. অন্য হাদীসে এসেছে, প্রত্যেক নেক আমলের জন্য আল্লাহ ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত সওয়াব দেবেন।[মুয়াত্তা মালিক], প্রত্যেকটি নেক আমলের জন্য আপনার নিষ্ঠা এবং খুশুর উপর ভিত্তি করে আপনি ৭০০ গুন পর্যন্ত সওয়াব পেতে পারেন। [ বুখারী] রামাদানের সময় এই নিষ্টা এবং খুশুর সাথে আমল করা অনেক সহজ, কারণ এই সময় শয়তানকে শিকলে বন্দী করে রাখা হয়। নবী স. বলেছেন “যখন রামাদান শুরু হয়, জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজা গুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। এবং এই সময় শয়তানকে শেকল বন্দী করা হয়।” [বুখারী] আবার রসুল স. বলেছেন “জামায়াতে সালাত আদায়কারলি একাকী পড়া অপেক্ষা ২৫ গুণ বেশি সওয়াব পাবে।" এখন এই সমস্ত হাদীসকে সামনে রেখে একটা অংক কষা যায়। মনে করি আপনি রামাদানে মাগরিবের নামাজ জামায়াতে আদায় করেছেন। তখন আপনার নিট সওয়াবের পরিমাণ হতে পারে - ৭০×৭০০×২৫ =১২২৫০০০! প্রায় বারো লাখের উপর সওয়াব। আপনার রবের মাহাত্ম্য কল্পনা করুন । এবং রামাদনের সম্পূর্ণ সুফল আদায়ের জন্য কোমর বেঁধে নেমে পড়ুন।
মহান আল্লাহর রহমত কখনোই গুনে শেষ করা যাবে না।
এই ব্যাখ্যার অন্য একটা দিক আছে, আর তাহচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে গোপনীয় কিছু পুরস্কারের, যেটা তিনি নির্দিষ্ট দিন, রাত অথবা মাসে দান করেন। যেমন রামদানের কথাই বলা যাক, এই মাসের সাথে সম্পৃক্ত আল্লাহর পক্ষ থেকে এমনই কিছু গোপনীয় উপহার বান্দার জন্য অপেক্ষা করছে, যেটা আমাদেরকে কঠোর পরিশ্রমের জন্য সাহস যোগাবে। আপনি রামজানের প্রথমেই হঠাৎ করে এমন কিছু অভ্যাস করা শুরু করলেন যেটা আপনি পুরো বছরে সম্পন্ন করতে পারেন নি।
আমাদের দ্বীনের এই বৈশিষ্ট্য রামাদান মাসে আমাদের অনুধাবন করতে শেখায় যে, আমরা নিজেদেরকে যতই অথর্ব ভাবি না কেন, আমাদের কর্মক্ষমতা কিন্তু অনেক বেশি। একটু ব্যাখ্যা করা যাক, আল্লাহ আমাদের সামনে পুরস্কারের বিশাল ভান্ডার ঝুলিয়ে রেখেছেন, আর আমরা এই পুরস্কার পাওয়ার জন্য আগের চেয়ে কঠোর পরিশ্রম করছি। এটা স্পষ্ট করে যে আপনি এবং আমি (আল্লাহই ভালো জানেন) এর কতটুকু অর্জন করতে পারবো। সুপ্রিয় পাঠক, আমরা নিজেদের উপর যতো বেশি আস্থা রাখি তার চেয়ে বেশি আমাদের উপর আল্লাহ তারচেয়ে বেশি বিশ্বাস করেন। রামাদানের এই উপহার আমাদেরকে আল্লাহর সে রহমত বাস্তবে প্রত্যক্ষ করার সুযোগ দেয়। তিনি আমাদেরকে দেখান যে, আমরা চাইলে পরিবর্তিত হতে পারি। এই মাসে আমাদের আচরণ পুরো বছর থেকে আলাদা হতে পারে। আর এজন্যই আল্লাহ এই মাসে শয়তানকে বন্দী করে রাখেন যাতে আমরা নৈতিকভাবে শক্তিশালী হতে পারি।
রামাদানের আরেক নাম পরিবর্তন
পরিবর্তনের প্রথম ধাপ হচ্ছে, বিশ্বাস করা যে, আমরা পরিবর্তনে সক্ষম। এবং এই ব্যাপারটাই আল্লাহ আমাদেরকে এই মাসে উপলব্ধি করার সুযোগ দেন। রামাদান শব্দটি আরবী ধাতুমূল রামাদা থেকে এসেছে, যার অর্থ হচ্ছে অভিতাপ বা তীব্র তাপ। এখন বিজ্ঞানের ছাত্র মাত্রই জানেন, তীব্র তাপ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কেন ব্যবহৃত হয়। কোন ধাতুকে গলানো এবং আকার দান করার জন্যই মুলত তীব্র তাপমাত্রার দরকার হয়। এখন এই উদাহরণটি আমাদের দ্বীনে রামাদানের সাথে কিভাবে সম্পৃক্ত? রামাদান হচ্ছে এমন একটা সময়, যেটা প্রতিবছর আমাদেরকে জীবনকে যে আকার দিতে চাই সে আকারে পৌছায়। আপনার খারাপ অভ্যাসগুলো ছেড়ে দেওয়া যতই কঠিন হোক না কেন, রামাদানের উষ্ণতা আপনার জীবনেকে ভালোর দিকে পরিবর্তন করবে।
এই জন্যই আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে করীমে তাকওয়া অর্জনের জন্য রোজা রাখার কথা বলেছেন” হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।” (বাকারা:১৮৩)। এখন যেহেতু আল্লাহ আমাদেরকে রামাদান দিয়েছেন, সেহেতু আমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারবো, তাহলে এই তাকওয়া মানে কী? আমি অসংখ্য ওয়াজ মাহফিল আর মসজিদের খুতবা শুনেছি যেখানে তাকওয়া মানে বলা হয়েছে খোদাভীতি। খোদাভীতি তাকওয়ার ফলে প্রাপ্ত একটা মানসিক অবস্থা, কিন্তু এটা তাকওয়ার সংজ্ঞা হতে পারে না। তাকওয়া শব্দটি আরবি ‘ওয়াকা’ নামক ধাতুমূল থেকে এসেছে, যার অর্থ রক্ষা করা, প্রতিহত করা, বাধা দেওয়া। তাহলে তাকওয়ার সঠিক অর্থ হিসেবে আমরা বলতে পারি, তাকওয়া হচ্ছে আল্লাহ যা করতে আদেশ করেছেন তা পালন এবং যা নিষেধ করেছেন তা বর্জন করে নিজেকে আল্লাহর কোপানল থেকে রক্ষা করা।
রামাদানের রোজা আপনার স্বভাবকে আল্লাহ যেভাবে চান সেভাবে চালাতে সুযোগ দান করে । আপনার স্বভাবকে ঢেলে সাজানোর সুযোগ দেয়। আল্লাহ রামাদানকে দীর্ঘ সময় জারি রাখেন, এটা কোন কাকতালীয় ব্যাপার না। মনোবিজ্ঞানী, নিউরোসায়েন্টিস্ট এবং মানব সম্পদ উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরা একমত যে, কোন স্বভাবকে গড়তে অথবা ভাঙতে কমপক্ষে ২১-২৮ দিন সময় লাগে, প্রায় এক চান্দ্রমাসের সমান সময়। আল্লাহ আমাদেরকে সারাবছর সময় দিয়েছেন কোন একটি অভ্যাসকে তৈরী করতে, আর রামাদান সে অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য সহায়ক হতে পারে।
তাহলে আমরা বুঝতে পারি কেন আল্লাহর রাসুল স. এর সাহাবীগণ ছয়মাস আগে থেকে রামাদানের প্রস্তুতি নিতেন এবং কিভাবে বাকি ছয়মাস রামাদানের সুফল ভোগ করতেন। তাদের সারা বছর রামাদানকে কেন্দ্র কের আবর্তিত হতো। এই ধারাবাহিক সিরিজে আমরা আপনাকে দেখাবো কিভাবে আমাদের ক্যালেন্ডারের দিনগুলি সাহাবীদের মতো কাটাতে পারেন। ইনশা আল্লাহ!!!
আমরা কিভাবে এটা করবো?
প্রত্যেক সফল উদ্যোগের পেছনে, সেটা রামাদান কেন্দ্রিক হোক অথবা অন্য যে কোন কিছুর জন্য হোক তিনটি ‘প’ খুবই গুরুত্বপূর্ণ
পরিকল্পনা- অভীষ্ঠ ফল লাভের জন্য লিখিত নীতিমালা ও কার্যপ্রনালী তৈরী করা। আমরা এই ব্যাপারে এই নোটে আলোচনা করবো।
প্রস্তুতি- পরিকল্পনা বাস্তবায়সের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি ও পদ্ধতি সংগ্রহ করা। আমরা পরের পোস্টে এটা নিয়ে আলোচনা করবো।
পদ্ধতি অনুশীলন- আসল কাজ শুরুর আগে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার চেষ্ট করা। এটা রামাদানের জন্যও সমানভাবে প্রযোজ্য। আল্লাহর রাসুল স. শাবান মাসে যতো রোজা রাখতেন বছরের অন্য মাসে ততো রোজা রাখতেন না, তিনি পুরো শাবান মাসই রোজা রাখতেন। [সুনানে নাসাঈ] রোজা রাখাটা ভারোত্তলনের মতোই। আপনি যদি শাবান ও অন্যান্য মাসে রোজা রাখেন তাহলে সেটা আপনার কাছে ভারি মনে হবে। কিন্তু যখনই রামাদান আসে তখন আল্লাহ শয়তানকে শেকলবন্দী করেন আর আপনার বোঝা কমিয়ে দেন, এবং পূর্বে যেটা আপনার ভারি, কঠিন মনে হতো সেটা তিনি হালকা করে দেন এবং আপনার ক্ষমতাকে সর্বোচ্চ করে দেন। সুবহানআল্লাহ।
এই প্রক্রিয়াটি আপনি যতো তাড়াতাড়ি শুরু করবেন ততই আপনি পরিকল্পনা, প্রস্তুতি আর পদ্ধতি অনুশীলনের সুযোগ পাবেন যেটা আপনার রামাদানকে আগের চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর করে তুলবে।
রামাদানে কী কী করতে পারেন
এই রামাদানে পুরো মাসের জন্য আপনার জন্য লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করুন। যদিও রামাদানে যতোই কাছে আসছে, আপনি ততই আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের কাছাকাছি হচ্ছেন, এবং নিজেকে পরিবর্তন করার সুযোগ পাচ্ছেন, কিন্তু এজন্য আপনাকে সুফি হতে হবে না (সেটা জন্য রামাদানের শেষ দশদিন তো আছেই), আপনার উদ্দেশ্যে বৈচিত্র্য আনুন আর সারাবছর জারি রাখতে পারেন এরকম কিছু আমল এবং অভ্যাসের চেষ্টা করুন। নিচে আপনার জন্য কিছু দিকনির্দেশনা দেওয়া হলো।
নামাজ
১। ফরজ:
পাচঁ ওয়াক্ত নামাজ জামায়াতে আদায়ের ব্যাপারটা বাধ্যতামুলক করুন। যদি আপনি পাচঁ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের ব্যাপারে অমনোযোগী হন, তাহলে এই রামাদানে আপনি সেই রোগটা সারাতে পারেন।
২। সুন্নাত:
প্রতিদিন বারো রাকাআত সুন্নাত নামাজ যথাসম্ভব আদায়ের চেষ্ট করুন।
৩। চাশতের নামাজ:
এর আরবী নাম সালাতুল দোহা। নফল এই নামাজে ফজিলত অনেক। রামাদানে অভ্যাস করতে পারেন।
৪। তারাবীহর নামাজ:
এই নামাজের চেয়ে রামাদানের সাথে প্রাসঙ্গিক অন্য কান নামাজ নেই। তবে মনে রাখবেন এশাটাও যেনো অবশ্যই জামায়াতের সাথে হয়।
৫। বিতর:
রাসুল স. এই নামাজ কখনোই ত্যাগ করেননি এমনকি সফরের সময়ও না। ইমামের সাথে তারাবীহর পরে বিতর আদায় আপনাকে সারাবছর এই নামাজ আদায়ে সহযোগীতা করবে।
৬। তাহাজ্জুদ:
শেষ দশদিনে আপনি তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে পারেন । কেননা এই দশদিনে লাইলাতুল ক্বদর খুজতে বলা হয়েছে। এই অভিজ্ঞতাটা বছরের অন্য সময়েও কাজে আসতে পারে।
৭। মসজিদে নামাজ আদায়:
এই রামাদানে আপনি মসজিদে নামাজ আদায়ের অভ্যাস করতে পারেন। বিশেষত ফরজ নামাজগুলো জামায়াতে আদায় করতে পারেন।
৮। নফল:
উপরে যে নামাজ গুলো বলা হয়েছে নিজেকে এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখবেন না। এছাড়াও সুযোগমতো নফল নামাজ আদায় করতে পারেন।
কোরআন
১। বুঝে বুঝে কোরআন পড়ুন:
কোরআন পড়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে একে বুঝে বুঝে পড়া, যাতে আপনি বুঝতে পারেন কোরআন আপনার মন ও মস্তিষ্কের উপর কি কি প্রভাব রাখছে। বুঝে পড়লে তারাবীহর সময় কি পড়া হচ্ছে সেটা আপনার বুঝতে সহজ হবে। আর আরবী শেখার গুরুত্বকে কখনই এড়িয়ে যাবেন না।
২। তেলাওয়াত:
যদি আপনার বুঝে পড়ার সুযোগ না থাকে তাহলে আপনি অন্তত কোরআন তেলাওয়াত করুন। কোরআন তেলাওয়াতের সময় আপনি শুদ্ধভাবে পড়তে চেষ্টা করুন, কোরআন তেলাওয়াত সহীহ না হয় তাহলে আপনি কোরআন তেলাওয়াত শিক্ষার কোন কোর্সে ভর্তি হতে পারেন। আমাদের দেশে রামাদানে প্রায় মসজিদে সহীহ তেলাওয়াত শিক্ষার জন্য কোর্স চলে। আপনিও যোগ দিতে পারেন।
৩। কোরআনের তেলাওয়াত শুনুন:
প্রত্যেকের প্রিয় একজন না একজন ক্বারী থাকতে পারে। আপনারা এই মাসে সে সমস্ত ক্বারীদের তেলাওয়াত শুনতে পারেন। আমি তো এই রামাদানে মিশারী রশিদ আল আফাসীর তেলাওয়াত শুনবো। আপনিও চেষ্টা করে দেখতে পারেন। অন্তত গান শোনার চেয়ে সেটা উত্তম হবে। বাসে, গাড়িতে অথবা হাটার সময়ও শুনতে পারেন।
৪। মুখস্থ করা এবং আগের গুলো পুনরাবৃত্তি করা:
এই মাসে আপনি কোরআনের কিছু অংশ মুখস্থ করতে পারেন। এবং আগের কোন অংশ মুখস্থ থাকলে সেটা রিভাইজ করতে পারেন। আশা করি আপনার লাভই হবে।
ইবাদাত
১। ই’তিখাফ:
রাসুল স. শেষ দশদিন ই'তিখাফে থাকতেন, যাতে তিনি সর্বোচ্চ পরিমাণ ইবাদাত করতে পারেন। এটা একটা অনন্য ইবাদাত যেটা রামাদানের বাইরে করা যায় না। এই সুফল লাভের কোন সুযোগই হাতছাড়া করবেন না।
২। দোয়া:
সূরা আল-বাকারার ১৮৬ নং আয়াতে আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তায়ালা এরশাদ করেন যে, আর আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে বস্তুতঃ আমি রয়েছি সন্নিকটে। যারা প্রার্থনা করে, তাদের প্রার্থনা কবুল করে নেই, যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে। কাজেই আমার হুকুম মান্য করা এবং আমার প্রতি নিঃসংশয়ে বিশ্বাস করা তাদের একান্ত কর্তব্য। যাতে তারা সৎপথে আসতে পারে।”
৩। সার্বক্ষণিক যিকর:
দৈনন্দিন অনেকগুলো যিকর-আযকার আছে। সকাল, সন্ধ্যা, শোবার আগে-পরে, ইস্তিগফার, তাসবীহ প্রভৃতি। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আপনি যেকোন একটা লক্ষ্য ঠিক করুন আর সে মতো যিকর-আযকার করতে থাকুন।
৪। তাফাক্কুর :
ই'তিকাফের সময় আপনি তাফাক্কুর করতে পারেন। আর আল্লাহর রহমত, জগত সৃষ্টির রহস্য, আল্লাহ প্রদত্ত মানুষের খেলাফতি দায়িত্ব, মানুষের জীবনের মূল্য প্রবৃতি নিয়ে তাফাক্কুর করতে পারেন।
৫। দাওয়াহ:
দাওয়াহ দু’ভাবে করতে পারেন। মুসলিমদের মাঝে রামাদানে করণীয় এবং আল্লাহভীতি অর্জনের মাধ্যম বর্ণনা করতে পারেন, আর অমুসলিমদের মাঝে রামাদানের মাহাত্ম্য , বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে রোজার সুফল প্রভৃতি ব্যাখ্যা করতে পারেন।
সামাজিক কাজ
রামাদান আসলেই সামাজিক ইবাদাত। সামষ্টিক ইফতার থেকে মসজিদে জামায়াতে তারাবীর নামাজ, প্রতিদিনই আপনি লোকজনের সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন। এই সময় আপনি আপনার পরিবারের সাথে সেহরী ও ইফতারের সময় কাটাতে পারেন। আর আপনার পুরাতন কোন বন্ধুর সাথেও যোগাযোগ করতে পারেন।
শারীরিক সুস্থতা
১। হাইড্রেশন:
গরমে রামাদানের এক নম্বর চ্যালেঞ্জ হলো মানুষ দীর্ঘক্ষণ হাইড্রেশনের সুযোগ পাইনা। প্রায় মানুষ ভুলবশত ক্ষুধার দিকে বেশি নজর দিয়ে খাওয়া শুরু করে, তারা ভুলে যায় যে তারা আসলে অনেক বেশি তৃষ্ণার্ত। এজন্য আগে থেকে আপনি সারাদিনের জন্য পানির পরিমাণ ঠিক করুন আর, যখন রোজা থাকেন না ( মাগরিবের পর থেকে সেহরীর সময় পর্যন্ত ঐ পরিমাণ পানি পান করুন। প্রয়োজনে এক বোতল পানি সাথে রাখুন।
২। বিশ্রাম:
দীর্ঘক্ষণ রোজা রাখলে আপনি ক্লান্ত হবেন এটাই স্বাভাবিক, পানিশূন্যতা আপনার ক্লান্তি আরো বাড়িয়ে দিবে। আপনি এই ব্যাপারটা মাথায় রেখে জোহরের পর হালকা ঘুমিয়ে নিতে পারেন অথবা আপনি আপনার রুটিনকে একটু পরিবর্তন করতে পারেন।
৩। খাদ্যাভ্যাস:
আপনার খাদ্যাভ্যাস আপনার ক্লান্ত শরীরের প্রভাব রাখবে। আপনি ইফতারে অতিভোজন করবেন না, কারণ, এতে আপনি আরো বেশি দুর্বল ও ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারেন।
৪। সুষম খাদ্য:
এমনিতেই সুষম খাদ্য এবং শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবারাহ করা আমাদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। রামাদানে তো আরো বেশি কষ্ট হবে। যদি প্রযোজন পড়ে তাহলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে ভিটামিন বা সাপ্লিমেন্টারি অষুধ খেতে পারেন। এছাড়া ফলের জুস করে খেতে পারেন। অল্প সময়ে অধিক পুষ্টি লাভের জন্য এর বিকল্প নেই।
৫। ফিটনেস:
কেউ কেউ বলেন রামাদানে ওজন কমানো সোজা। বাস্তবে অনেকেই মাত্রাতিরিক্ত খাবারের ফলে ওজন বাড়িয়ে ফেলেন। আপনি কোনটা গ্রহণ করবেন সেটা ভেবে দেখুন।
রোজা:
আশ্চর্য হবেন না, আপনি রোজার জন্যও লক্ষমাত্রা ঠিক করতে পারেন। ইমাম গাযযালী র. এর মতে রোজা রাখার তিনটা পর্যায় রয়েছে। আপনি কোনটা গ্রহণ করছেন? চিন্তা করবেন না, এবছর না পারলে আগামী বছর নিশ্চয় পারবেন।
পর্যায় ১: খাবার, পানীয় ও দিনের বেলা জৈবিক চাহিদা থেকে বিরত থাকা।
পর্যায় ২: খারাপ কাজ ও কথা থেকে বিরত থাকা।
পর্যায় ৩: খারাপ এবং অশালীন চিন্তা থেকে বিরত থাকা।
আর্থিক কুরবানীর লক্ষ্য
১। সাদাকাহ:
‘‘ রাসুল স. ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উদার। এবং রামাদানে তার উদারতা আরো বেড়ে যেতো। তিনি দ্রুত প্রবাহমান বাতাসের চেয়েওে বেশিউদার ছিলেন।" [সহীহ আল বুখারী]
২। অপরকে ইফতার করানো:
অন্য কারো আমল থেকেও সুফল লাভের অন্যতম উপায় হচ্ছে রোজাদারকে ইফতার করানো। আপনি এই রামাদানে কয়জন রোজাদারকে ইফতার করাবেন? কয়টা ইফতার মাহফিলে সহযোগীতা করবেন ঠিক করে ফেলুন।
৩। যাকাত আল-মাল:
অনেক লোক রামাদানকে যাকাত প্রদানের সময় হিসেবে বেছে নেন। আপনি যদি রামাদানে যাকাত আদায় করতে চান তাহলে আপনার আগে ভাগেই পরিকল্পনা করতে হবে এবং প্রস্তুতি নিতে হবে।
৪। ফিতরাহ আদায় করা:
প্রত্যেকেরেই ফিতরাহ আদায় করা বাঞ্চনীয়। আগেভাগেই ফিতরাহ আদায়ের কথা মাথায় রাখুন।
৫। ওমরাহ আদায়:
রামাদানে কা’বায় তারাবী আদায় এবং উমরা আদায়ের চেয়ে উত্তম কোন কাজ হতে পারেনা । যদিও আমি এখনও আদায় করতে পারিনি। তবে আশা করছি একদিন আদায় করবো ইনশাআল্লাহ।
চরিত্র:
সর্বশেষ কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, আপনার চরিত্রকে সংশোধনের জন্য উত্তম সময়। কোন্ স্বভাবটি বদলাবেন এবং কোন্ স্বভাবটি গড়ে তুলবেন, এবং আরো উন্নত করবেন সেটি আপনি ঠিক করতে পারেন। সত্যবাদিতা, নম্রতা, উদারতা, ধৈর্য, বিনয়, বিশ্বাসযোগ্যতা, রহমত অথবা এমন গুণ যা এখানে অনুল্লেখিত রয়েছে, আপনি এই মাসে অর্জনের জন্য চেষ্ট করতে পারেন। আপনি আপনার রাগ কমানোর চেষ্টা করতে পারেন অথবা রোগী দেখতে যাওয়াকেও বেছে নিতে পারেন।
কর্মপন্থা
১. একটা কাগজ নেন আর এখানে এই রামাদানে কেন আপনি আপনার উন্নতি করতে চান, কোন নিয়্যতে কাজ করবেন সেটা লিখে ফেলুন। আপনার রামাদানের কাজ সফল হওয়ার জন্য এটা আপনার জরুরী হতে পারে।
২. অন্তত পক্ষে তিরিশ মিনিটি উপরে যে করণীয়গুলো ঠিক করা হয়েছে সে সম্পর্কে চিন্তা করুন। এবং নিজের জন্য অন্তত পনেরোটি করনীয় ঠিক করুন।
৩. এই নোটটা শেয়ার করুন। আপনার বন্ধু অথবা আত্মীয় স্বজনদের সাথে এই ব্যাপারে আলাপ করুন। আপনার উদ্দেশ্য তাদের কাছে ব্যাখ্যা করুন।
আপনার মতামত জানান।
৪. আমার জন্য দোয়া করবেন।
বি. দ্রঃ এই লেখাটি প্রোডাক্টিভ মুসলিম ওয়েবসাইট থেকে রূপান্তরিত।
দ্বিতীয় পর্বঃ আপনার লক্ষ্য স্থির করেছেন তো