বিগত বছরে এই দিনে বিশ্ববাসী মিশরের ইতিহাসে প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মুরসির উৎখাত প্রত্যক্ষ করেছে। ২০১৩ সালের ৩ জুলাই তাকে জোরপূর্বক ক্ষমতার মসনদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ডঃ মুহাম্মদ মুরসি গণভোটে নির্বাচিত হয়ে এক বছর পূর্ণ হতে না হতেই আব্দেল ফাতাহ্ আল সিসি দ্বারা সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন। তখন আল সিসি ছিলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী। এখন উপযুক্ত সময় মুরসি শাসনামলের এক বছর এবং আল সিসির ক্ষমতার এক বছর পর্যালোচনা করার। বিগত ১২ মাসে সূত্রপাত হয়েছে অনেক নজিরবিহীন ঘটনার যার মধ্যে আল সিসির প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনে দাঁড়ানো অন্যতম। উক্ত নির্বাচনে তার জয়ী হওয়াটাকে অনেকেই অবৈধ ও প্রহসনমূলক মন্তব্য করেছেন।
প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনী প্রচারণাঃ
প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ও পলিসির তুলনামূলক পর্যালোচনার মাধ্যমে অভ্যুত্থানের নেপথ্য ব্যক্তি (আল সিসি) যার উপর অনেকেই মিশরের সমস্যা সমাধানের আশা করছেন এবং ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্টের (মুরসি) রাষ্ট্র পরিচালনায় দূরদর্শিতা ও অভিব্যক্তির পার্থক্য স্পষ্ট করা যায়।
আল সিসির নির্বাচনী প্রচারণায় তাকে মিশরের কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিয়ে আল সিসি মিশরীয়দের সাধারণ বাল্বগুলোকে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাল্বে রূপান্তরিত করার এবং বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার কমিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দেন। অন্যদিকে ২০১২ সালের নির্বাচনি প্রচারণায় মুরসি একই প্রশ্নের জবাবে ‘রেনেসাঁ প্রকল্পের’ স্বপ্ন দেখান। তিনি বিদ্যুৎ ঘাটতি দূর করতে প্রস্তাব করেন পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের। শুধু তাই নয়, উক্ত প্রকল্পের অধীনে উৎপাদিত উদ্ধৃত্ত শক্তি রপ্তানি করে তিনি মিশরীয়দের জাতীয় আয় বৃদ্ধি করার প্রতিশ্রুতি দেন।
অনেক মিশরীয় নাগরিকের এমনকি রুটি কেনার সামর্থ না থাকায় সরকারের ভর্তুকি দেয়া রুটি কিনতে লাইনে দাঁড়াতে হয়। উক্ত সমস্যার বিপরীতে আল সিসি জানান তিনি মিশরীয় পরিবারগুলোকে খাদ্য সঞ্চয় এবং একটি করে রুটি বাঁচাতে নির্দেশ দিবেন। “যদি ২৫ মিলিয়ন পরিবার একটি রুটির এক চতুর্থাংশ না খেয়ে সঞ্চয় করে, তাহলে অভুক্ত, ক্ষুধা নাঙ্গা মানুষগুলোর জন্য ২৫ মিলিয়ন রুটির ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে”- তিনি যুক্তি দেখান।
অপরপক্ষে, মুরসি গমের উৎপাদন বাড়ানোকে খাদ্য ঘাটতি পূরণের উপায় হিসেবে অনুধাবন করেন। তিনি ধারণা দেন সুদান এবং ইথিওপিয়া থেকে জায়গা ভাড়া নিয়ে চাষাবাদের যাতে পানিসম্পদের অপচয় রোধ করা যায়। তাঁর লক্ষ্যই ছিল চার বছরে মিশরকে গমে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা।
মিশরে বিদেশি বিনিয়োগকারী ও পর্যটক আগমন না করার কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যায়। উক্ত সমস্যা সামাল দিতে আল সিসি প্রবাসী মিশরীয়দের প্রতি মাসে ১০ ডলার করে দেশে পাঠানোর পরামর্শ দেন। এক্ষেত্রে মুরসি সুয়েজ খালে গমনশীল বিদেশি জাহাজগুলো থেকে ফি বৃদ্ধি করার পরামর্শ দেন।
৯ কোটি মিশরীয়দের মধ্যে বিরাজমান ১৩.৪ শতাংশ বেকারত্ব সমস্যা দূরীকরণে আল সিসি ১০০০ গাড়ি কিনার পরামর্শ দেন। উক্ত গাড়িগুলোতে যুবকরা সবজি বিক্রি করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে নিবে। মুরসির মতো এক্ষেত্রে ভিন্ন। বেকার সমস্যা দূরিকরণে তিনি উদ্যোগ নেন কিছু ছোট ও বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের, যেমনঃ কম্পিউটার ও টেলিভিশনের যন্ত্রাংশ একত্রিত করা, সুয়েজ খাল উন্নয়ন এবং অন্যান্য শ্রম নিবিড় প্রকল্পসমূহ। মুরসির মতে সুয়েজ খাল প্রকল্প জাতীয় আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি লক্ষ বেকারের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করবে।
ইসরাইলের সাথে ক্যাম্প ডেভিড চুক্তির বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে, আল সিসি উক্ত চুক্তির শর্তগুলো রক্ষা এবং সীমান্ত সুরক্ষায় ইসরাইলকে সহযোগিতা করার কথা বলেন। বিপরীতভাবে, মুরসি এ ব্যাপারে মিশরের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের উপর জোর দেন। তাঁর মতে, “মিশরকে আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে সব দেশ ও গোষ্ঠির সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে; ৫০ লাখ লোক ৯ কোটি জনগণকে ভয় দেখানো অযৌক্তিক”।
উল্লেখিত বিষয়গুলো পরিচালনায় উভয় শাসকের দূরদর্শিতা ও অভিব্যক্তির পার্থক্য দিবালোকের মতো স্পষ্ট। মিশরের বিরাজমান ক্ষতগুলোতে আল সিসি শক্ত বন্ধনী আটকাতে চান, অন্যদিকে মুরসি ঐ ক্ষতগুলো গোড়া থেকে সেরে তুলে দীর্ঘ মেয়াদী সমাধানে পৌঁছাতে প্রচেষ্টায় ছিলেন। তিনি জোর দেন, “আমাদের খাদ্য, ঔষধ ও যুদ্ধাস্ত্র নিজেদেরকে তৈরি করতে হবে”। নির্বাচনি প্রচারণায় আল সিসির অর্থনৈতিক নীতি আঁচ করা কঠিন ছিল, কেননা তার কোন অর্থনৈতিক নীতিই ছিল না।
রাষ্ট্র পরিচালনার পূর্বে তাদের ব্যক্তিজীবনঃ
মিশরীয় ক্ষমতার মস্নদে অধিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে মুরসি ও আল সিসির ব্যক্তিজীবন কেমন ছিল; তাদের পরিচয় কী? মুহাম্মদ মুরসি ঈসা আল আয়াহ জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫১ সালে। তিনি কায়রো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকৌশলে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেন। অতঃপর তিনি আমেরিকার সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮২ সালে ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করেন। শিক্ষা শেষে মুরসি আমেরিকার দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। নিজ দেশে এসে তিনি আল যাকাযিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল শাখায় প্রফেসর এবং ডীন ছিলেন।
শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি মুরসি মুসলিম ব্রাদারহুডের ভিতর দিয়ে রাজনৈতিক জীবনে অংশগ্রহণ করেন। ২০০০ সালের নির্বাচনে একটি সংসদীয় আসনে জয়ী হওয়ার পর মুরসি ব্রাদারহুডের সংসদীয় মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করেন। তাকে সর্বসম্মতভাবে ২০০০-২০০৫ সালের সেরা সংসদীয় ব্যক্তি হিসেবে উপাধি দেওয়া হয়। ২০১১ সালে মুরসি ব্রাদারহুডের রাজনৈতিক শাখা ফ্রিডম এন্ড জাস্টিস পার্টির (এফজেপি) প্রধান ছিলেন এবং ২০১২ সালের সংসদীয় নির্বাচনে জয়ী হন। তিনি প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হওয়ার পর এফজেপি এবং ব্রাদারহুড থেকে অবসর নেন।
অপরপক্ষে, আব্দেল ফাতাহ সায়িদ হুসাইন খালিদ আল সিসি জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫৪ সালে। তিনি সামরিক প্রতিষ্ঠান থেকে ১৯৭৭ সালে স্নাতক শেষ করার পর পদাতিক বাহিনীতে যোগদান করেন। ২০০৬ সালে তিনি আমেরিকার ওয়ারটাইম মিলিটারি কলেজে অধ্যয়ন করেন এবং সউদি আরবে মিশরের সামরিক বোদ্ধা ও কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। সরাসরি কোন যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করে ও আল সিসিকে সেনাবাহীনির অভ্যন্তরে পদোন্নতি দেওয়া হয় এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন করা হয়। তাকে মিশরের পদাতিক বাহিনীর প্রধান এবং আলেকজান্দ্রিয়ার উত্তরাংশের সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত করা হয়। মুরসি তাকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগের পূর্বে আল সিসি দেশীয় গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান ছিলেন। ২০১২ সালের আগস্ট মাসে মন্ত্রিত্ব পাওয়ার পূর্বে আল সিসি জনগণের কাছে অপরিচিত ও নগন্য ছিলেন।
নির্বাচন এবং জনপ্রিয়তাঃ
২০১২ সালের নির্বাচনে মুরসির নির্বাচিত হওয়া ছিল গণতন্ত্রের এবং ২৫ জানুয়ারি বিপ্লবের বিজয়। বিপ্লবটি মিশরের জনগণকে এক সামিয়ানার নিচে অনে। নির্বচনের ফলাফল নির্দেশ করে যে, মিশরের জনগণ শাসকের ধরণ নির্ধারণে ঐক্যমতে পৌঁছাতে পেরেছেন। বিপরীতভাবে, এই বছরের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সেই কালো রক্তাক্ত সামরিক অভ্যুত্থানের পর, যা ৮০০০ লোকের প্রাণ সংহার করে এবং কারারুদ্ধ করে ৪৪,০০০ এর বেশি নারী, পুরুষ ও শিশুকে।
তাছাড়া ২০১২ সালের নির্বাচন সকলের জন্য উন্মুক্ত ছিল। ১৩ জন প্রার্থী উক্ত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন। অপরপক্ষে ২০১৪ সালের নির্বাচনে সবাই এক পুতুল প্রতিদ্বন্ধি প্রত্যক্ষ করে। আল সিসির নির্বাচন বিগত ৬ দশকের স্বৈরাচারি শাসনের পুনরাবৃত্তির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। অবশ্য অভ্যুত্থান - সমর্থক অনেক দল ৩০ জুন বিপ্লব ও ৬ এপ্রিলের আন্দোলনকে উদ্যাপন করতে অস্বীকার করেছিল। সর্বোপরি, সালাফি নূর দল নির্বাচন থেকে অন্যান্য দল বহিষ্কার করার বিষয়কে কেন্দ্র করে যে বিরোধের সূত্রপাত করে, তা অতীত মিশরের জাতিগত বিভাজনের সকল ইতিহাসকে ভঙ্গ করে।
মুরসি তার বিনয়ী স্বভাব দিয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। নির্বাচনে জেতার পরে ও মুরসি তার পুরনো বাসায় ভাড়া দিয়ে থাকতেন এবং প্রতি মাসে ১৬৫০ ডলারের রাষ্ট্রীয় ভাতায় নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেন। তিনি সরকারি আমলা ও সদস্যদের সাথে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করতেন এবং তাদের সাথে একত্রে সালাত আদায় করতেন। নির্বাচন পরবর্তী তাহরির চত্ত্বরের ভাষণ ও জনগণের সাথে সাক্ষাতে তিনি ব্যক্তিগত নিরাপত্তা প্রহরী রাখাকে অপছন্দ করতেন। অন্যদিকে, আল সিসির নকল জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও প্রাণের ভয়ে তিনি এখনো কোন গণ সমাবেশে হাজির হন নি।
আল সিসি সুনির্দিষ্ট সাংবাদিক দিয়ে সুপরিকল্পিত সাক্ষাৎকার গণমাধ্যমে প্রচার করেন। তিনি জাতীয় নিরাপত্তার গুজব তুলে পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া গোপন রাখেন। মিশরের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন তাকে গণমুক্তির নায়ক হিসেবে আদর্শায়িত করে এবং তুলনা করে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট নাসেরের সাথে। কতিপয় দুঃখজনক ঘটনার পরে সিসি জ্বর বাড়তে থাকে। এর পাশাপাশি গণমাধ্যমগুলো বিরোধী পক্ষকে অশুভ শক্তির ভূমিকায় রেখে, আল সিসিকে প্রদর্শন করে মহামানব হিসেবে।
অর্জনসমূহঃ
আল সিসির নেতৃত্বাধীন বিগত ৩৬৫ দিনে মিশরে মানবাধিকারের লঙ্ঘন ছিল চোখে পড়ার মতো। ৮,০০০ মানুষ হত্যা, ২০,০০০ এর বেশি নাগরিকের গুরুতর আহত হওয়া এবং আল সিসির মদদপুষ্ট কিছু আলেম উক্ত রক্তের হোলি খেলার অনুমোদন প্রদানে মানব জীবনের ইজ্জত আব্রু ভূলণ্ঠিত হয়েছে। মিশর চোখ বুজে সহ্য করেছে স্বাধীনতা ও অধীকার হননের ভয়াবহ ঘনঘটা। আল সিসি অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ৪৮ সাংবাদিকসহ ৪৪,০০০ রাজনৈতিক ব্যক্তিদেরকে কারাবন্দি করে রাখে এবং শত শত লোকের মৃত্যুদণ্ডের ফরমান জারি করে।
অভ্যুত্থানের পর মিশরের বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল ও পত্র-পত্রিকা ছাপাখানা সিলগালা করে দেওয়া হয়। ফ্রিডম হাউজের মতে, দেশটি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ, শান্তিপূর্ন সমাবেশ, বিচারিক স্বাধীনতা ও আইনের শাসন সহ আরো কিছু বিষয় বিবেচনায় পৃথিবীর সর্বনিম্ন স্বাধীনতা উপভোগকারী ৪৮ টি দেশের একটিতে অবস্থান করছে। মিশর আবারো ফিরে গেছে পুলিশি রাষ্ট্রের অন্ধকারে। বর্তমানে রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানের উপর সেনাবাহিনীর একচ্ছত্র আধিপত্য বিদ্যমান।
অপরপক্ষে, মুরসির সময়ে ৩০ টা বিদ্রোহ সত্ত্বে ও তেমন কোন গুরুতর সহিংসতার ঘটনা ঘটে নি। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমনকারি আইনটি অবলুপ্ত করা হয়েছিল এবং রাজনৈতিক বন্দীর নাম নিশানা ও পাওয়া যায় নি। তার আমলে ২০১৩ সালের প্রথম অর্ধেকে পর্যটকের সংখ্যা বেড়ে ৭০ লাখে দাঁড়ায়, যা মিশরের জাতীয় অর্থনীতিতে ৫০ লাখ ডলার যোগ করে। আগস্টের ধ্বংসযজ্ঞ ও সামরিক অভ্যুত্থানের পরে পর্যটক শিল্পের আয় ৩০ শতাংশ নিচে নেমে আসে এবং কায়রোর গণহত্যার পর তা শূণ্যের কোটায় থেমে যায়।
মুরসি প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর আমদানি করা তেলের সঞ্চয় ১৪ মিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ১৮.৮ মিলিয়নে উঠে দাঁড়ায়। অন্যদিকে, সামরিক অভ্যুত্থানের এক মাসের মাথায় তেলের সংগ্রহ ৩.৯ মিলিয়ন ডলার হ্রাস পেয়ে ১৪.৯ মিলিয়নে নেমে যায়।
দেশের অভ্যন্তরে ও বাইরে মুরসি বহু নেতাদের সাথে দেশীয় স্বার্থে সাক্ষাত করেন। আফ্রিকান ইউনিয়নের সমাবেশে মুরসিকে অত্যন্ত মর্যাদার সাথে স্বাগত জানিয়ে সামনের সারিতে উপবিষ্ট করানো হয়। অপরপক্ষে, অভ্যুত্থানের দু’দিন পরে আফ্রিকান ইউনিয়নের শান্তি ও নিরাপত্তা বিভাগ মিশরের সদস্যপদ বাতিল করে। আল সিসির নির্বাচনে জিতার পর উক্ত সদস্যপদ অনাগ্রহের সহিত পুনর্বহাল করা হয়। আফ্রিকার দারিদ্র নিরসনের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহের পরিচালক স্যাম আকাকী আল সিসির মানবাধিকার ভূলণ্ঠনের বিভিন্ন দৃষ্টান্ত তুলে ধরে সদস্যপদ পুনরায় বাদ দেওয়ার আহবান জানান। যাই হোক, সদ্য অনুষ্ঠিত আফ্রিকান সমাবেশে আল সিসিকে তৃতীয় সারিতে বসার জায়গা দেওয়া হয়।
ইতিহাসই হবে বিচারকঃ
মিশরীয়দের জন্য অর্থনীতি, নিরাপত্তা এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতা মৌলিক বিষয়। বিগত বছরে মৌলিক প্রয়োজনগুলো নজীরবিহীনভাবে পদপিষ্ট হয়েছে। গ্রীষ্মকালীন রমযানের এই মাসে মিশরীয়রা নাকাল হচ্ছে খাদ্যদ্রব্যের উর্ধ্বগতি ও মুহুর্মুহু বিদ্যুৎ বিভ্রাটে। বলতে হয়, রমযান এই বৎসর মিশরীয়দের কাছে প্রবেশ করেছে দুঃখের ভার নিয়ে। এই মাসে জনগণের আধ্যাত্মিক চর্চাগুলো নিয়ন্ত্রণ করে পাশ করা হয়েছে অনেক আইন ও নিষেধাজ্ঞার। বন্ধ করা হয়েছে শত শত মসজিদ। উন্মুক্ত মসজিদে প্রবেশ করতে প্রয়োজন হচ্ছে পরিচয় পত্রের। তারাবির নামায সংক্ষিপ্ত করে দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এই রমযানে জনগণের চিন্তা ভিন্ন খাতে ফিরাতে আয়োজন করেছে ৩০ টি ধারাবাহিক নাটকের। প্রশ্ন হলো, মিশরীয়রা কি এই ধীর বিষক্রিয়া থেকে জেগে আত্মপরিচয় খোঁজার তদবির করবে এবং বর্তমান দলন, নিপীড়ন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিবে? অনাগত ভবিষ্যত তার উত্তর দিবে।
প্রেসিডেন্ট মুরসি পরিপূর্ণ না ও হতে পারেন, তিনি ভুল করতে পারেন; কিন্তু এক বছর যেতে না যেতে দেশটি আবারো দীর্ঘ ৬০ বছরের স্বৈরাচারি, পেশিবাদি, অন্ধকার শাসন ব্যবস্থায় ফিরে যাবে তা মেনে নেওয়া অযৌক্তিক। আল সিসির বিগত বছরগুলোর “অর্জনসমূহ” পর্যালোচনা করে কেউ কি সত্যিকার অর্থে সামরিক অভ্যুত্থানকে সমর্থন জানাতে পারে?
সূত্রঃ Middle East Monitor