হাসান আল তুরাবী

এক

সুদানের বিপ্লবী রাজনীতিবিদ ও তাত্ত্বিক ড. হাসান আল তুরাবীর গুরুত্ব ও মর্যাদা মুসলিম বিশ্ব ও পশ্চিমী দুনিয়ায় তাঁর জাতীয় পরিচিতিকে ছাড়িয়ে বহুদূর বিস্তৃত। তিনি সুদান সংসদের স্পিকার, সেদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, উপপ্রধানমন্ত্রী, এটর্নি জেনারেল প্রভৃতি নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন। তার চেয়ে বড় কথা লন্ডন ও সোরবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র তুরাবী একই সঙ্গে ইসলামী ঐতিহ্য ও আইন বিশেষজ্ঞ, পশ্চিমা সভ্যতা সম্পর্কে সমসাময়িক ইসলামী ভাবনার অন্যতম প্রধান ভাষ্যকার এবং ইসলামী জগতের অগ্রণী তাত্ত্বিক নেতা।

সোরবোর্নে তাঁর পিএইচডির বিষয় ছিল উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জরুরী অবস্থা সম্পর্কিত ক্ষমতার প্রয়োগ কতটা গ্রহণযোগ্য। পিএইচডি শেষে ১৯৬৪ সালে দেশে ফেরার পর সবাই মনে করেছিল তুরাবী হবেন সুদানের প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ। কিন্তু সেই পথে না গিয়ে তিনি হয়ে যান বর্তমান পৃথিবীর অন্যতম দৃশ্যমান ও প্রভাবশালী মুসলিম  নেতা ও তাত্ত্বিক। আজকে ইসলামী ও পশ্চিমা সভ্যতার ঠানাপোড়ন থেকে উঠে আসা সামাজিক রাজনৈতিক প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে গেলে তুরাবীর নজির টানা জরুরী হয়ে পড়ে। এ কারণেই তাকে আধুনিক ইসলামী মননের অন্যতম সংকট বিশ্লেষক হিসেবে গণ্য করা হয়।

দেশে ফেরার পর তুরাবী খার্তুম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ফ্যাকাল্টিতে গুরুত্বপূর্ণ পদায়ন পান। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই আহবান উপেক্ষা করে তৎকালীন সুদানী সামরিক শাসক ইব্রাহিম আবুদের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত জনসমাবেশে এক তীব্র ও ঝাঁঝালো বক্তৃতা দেন। সেই থেকে তুরাবী সুদানী রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে এসে হাজির হন এবং আজও তিনি সেখানে অবস্থান করছেন। অনেকের ধারণা ১৯৮৯ সালে সুদানে ইসলামী শক্তির মদদে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে যে উমর আল বশিরের সরকার ক্ষমতায় আসে তার প্রধান তাত্ত্বিক ও নেপথ্যের নায়ক আসলে তিনি। তুরাবীর সবচেয়ে বড় ভূমিকা হচ্ছে তিনি তাঁর জীবদ্দশায় কয়েক দশকের মধ্যে সুদানী সমাজ ও রাষ্ট্রের ইসলামীকরণের ক্ষেত্রে এক ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ইসলামের অন্তর্মুখিতা কাটিয়ে তিনি এটিকে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রোগ্রাম হিসেবে সকলের সামনে তুলে ধরেছেন যা অনেকের কাছে চ্যালেঞ্জের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দুই

হাসান আল তুরাবী হচ্ছেন সুদানের এক দীর্ঘ ধর্মীয় ঐতিহ্যবাহী পরিবারে সন্তান। এই পরিবারের সদস্যরা তাঁদের ধার্মিকতা, বিদ্যাবুদ্ধি ও সামাজিক কাজ-কর্মের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। তুরাবীর পরিবারের পূর্বপুরুষ ছিলেন আঠারো শতকের আলেম ও ফকীহ ওয়াদ আল তুরাব, খার্তুমের দক্ষিণে যার বিখ্যাত দরগাহ রয়েছে। হাসান আল তু্রাবীর ভাষায় তিনি হলেন সুদানের প্রথম মাহদী, যিনি ছিলেন একই সাথে বুদ্ধিজীবী, সংস্কারপন্থী ও একজন সুফী। হাসান আল তুরাবীর জীবনে আমরা এই ত্রিগুণের এক অপূর্ব সমাবেশ দেখি।
তুরাবীর পিতা ছিলেন সেকালের সুদানের ব্রিটিশ প্রশাসনের অধীন শরীয়াহ্‌ আদালতের একজন বিচারক। তিনি ওমদুর মানের বিখ্যাত ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র আল মাহাদ আল ইলমি থেকে গ্রাজুয়েট হয়েছিলেন। তুরাবী জানিয়েছেন সরকারি চাকরির বদলির সূত্রে তাঁর বিচারক পিতাকে সুদানের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতে হয়েছে। সেই সাথে তাঁর পরিবারকেও ঘুরতে হয়েছে। এছাড়া ব্রিটিশ প্রশাসকদের হাত থেকে তুরবীর পিতা তাঁর কর্তৃত্ব রক্ষার সবসময় একটা চেষ্টা করেছেন। এ কারণেও তাকে বারংবার বদলি করা হয়েছে।

হাসান আল তুরাবির জন্ম সুদানের কাসসালায়, ১৯৩২ সালে। তুরাবী ছিলেন ভাইবোনের মধ্যে কনিষ্ঠ এবং তাঁর জন্মের অল্প কিছুদিন পরেই তাঁর মা মারা যান। ফলে তাঁকে বিচারক পিতার তত্ত্বাবধানেই কাটাতে হয় এবং সুদানের বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে হয়। পিতার সাথে তুরাবীর ঘুরে বেড়ানো ও পড়াশোনা নিয়ে পরবর্তীকালে এক হৃদয়গ্রাহী মন্তব্য করেছেন তিনিঃ I went to school in each of the local places, but I look forward after vacations to going back to school.[১]

পিতার কাছেই তুরাবীর লেখাপড়ার হাতেখড়ি। বিচারক পিতা সন্ধ্যার পর এবং ছুটির সময় তুরাবীকে নিজে পড়াতেন যাতে তার পুত্র সত্যিকারের শিক্ষাটা পায়। পিতার তত্ত্বাবধানে অল্প বয়সে তুরাবী ইবনে মালিকের আলফিয়া ও লামিয়াত আফাল পড়ে মুখস্থ করেন। এ দু’টো ব্যাকরণ বই ঐতিহ্যবাহী ইসলামী শিক্ষার জন্য ছিল, কারণ এটি কুরআনের ভাষা ব্যাখ্যায় সাহায্য করতো। ১৯৫০ সালের মধ্যে তিনি মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করেন এবং বিদ্যালয়ে প্রবেশের প্রস্তুতি নেন। খার্তুম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর তিনি এখানকার ছাত্র সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের সংস্পর্শে আসেন। ব্রাদারহুড তাঁর চিন্তা ভাবনার মোড় অনেকটাই ঘুরিয়ে দেয়। তিনি সেদিনকার অভিজ্ঞতার কথা এভাবে বলেছেনঃ

…the Islamic movement which I met at the university was quite an experience for me. All of the dead literature that I had learned by heart became alive. I saw everything in a different light.[২]

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে তিনি বিলাত যান এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৭ সালে আইনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন এবং প্যারিসের সোরবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনের উপর পিএইচডি অর্জন করেন।

১৯৬৪ সালে দেশে ফিরে তিনি প্রথম কাজ করেন খার্তুম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নীতি-নির্ধারণী বিতর্কে সুদানের তৎকালীন সামরিক শাসক ইব্রাহীম আবুদকে আক্রমন করেন। এটি চলমান আবুদবিরোধী আন্দোলনে নতুন গতি দেয় এবং বিরোধী দলের এই আন্দোলনে মুসলিম ব্রাদারহুডের অবস্থানকে আরো মজবুত করে। এর ফলে ১৯৬৪ সালের অক্টোবরে আবুদ সরকারের পতন ঘটে।

এই আন্দোলনের সফলতা এবং তুরাবী ও মুসলিম ব্রাদারহুডের অভিজ্ঞতা তুরাবীর রাজনৈতিক পরিপক্বতার প্রমাণ। তুরাবীর এই সাফল্য ঠিক সরাসরি ইসলামী কোন অবস্থান থেকে আসেনি বরং একটি সামগ্রিক সমস্যার তিনি একটি ইসলামী অভিব্যক্তি ঘটিয়েছিলেন। তুরাবীর নেতৃত্বের এই বিশেষ কৌশলই তাঁকে সুদানী রাজনীতি ও ইসলামী আন্দোলনের মধ্যমণি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

হাসান আল তুরাবী রাজনীতিবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ও আলোচিত হলেও মূলত তিনি একজন বুদ্ধিজীবী। তাঁর সমসাময়িক সুদানী রাজনীতিবিদদের তুলনায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার দিক দিয়ে তিনি অনেক অগ্রসর। একই সাথে সুদানের ব্রাদারহুডের নেতৃত্বও তিনি দিয়েছেন। রাজনৈতিক নেতৃত্ব দিতে যেয়ে অন্যান্য রাজনীতিবিদদের সাথে তার প্রতিদ্বন্দ্বি্তায় নামতে হয়েছে। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনি অন্য সকলকে ছাড়িয়ে গেছেন এবং ব্রাদারহুডের মতো একটি এলিটিস্ট প্রতিষ্ঠানকে রীতিমত জনপ্রিয় রাজনৈতিক সংগঠনে পরিণত করেছন।

তিন

হাসান আল তুরাবীর চিন্তাভাবনার মূলে আছে তাঁর ইসলামকে বিশ্বশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন। কিন্তু সেই রকম সামর্থ্য অর্জন করতে হলে তুরাবী মনে করেন আধুনিককালে ইসলামের তাজদীদ বা পুনরুজ্জীবন দরকার। এই কাজ করতে হলে প্রথমে চাই একালে মুসলিম সমাজের দুর্বলতাগুলোকে চিহ্নিত করা এবং সকল বিশ্বাসীকে এই পুনরুজ্জীবন প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়া।

তুরাবীর মুসলিম ইতিহাস চিন্তার একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে তাজদীদ। কারণ প্রতি যুগেই ইসলামের তাজদীদ প্রয়োজন। এই প্রক্রিয়া অব্যাহত না থাকলে পরবর্তী প্রজন্মের বিকাশ স্তব্ধ হয়ে যায় এবং ইসলাম পরিণত হয় একটি আচারসর্বস্ব জীবনীশক্তিহীন ধর্মে। অবশেষে দেখা যায় ইসলাম বিশ্বাসীরা এমন রীতিনীতি নিয়ে বসবাস করছে যাকে আর কোনভাবেই ইসলামসম্মত বলা চলে না।

তুরাবী তাই মনে করেন ইসলামী সভ্যতার ইতিহাসে এই তাজদীদ ও তাকলীদের (অতীতের অন্ধ অনুকরণ) পারস্পারিক উত্তেজনা ও দ্বন্দ্বমানতা বরাবর ছিল। তুরাবী অবশ্য এটা মনে করেন না তাজদীদ মানে হচ্ছে ইসলামের মৌলিক নীতিকে পাল্টে দেয়া কিংবা নতুন পরিস্থিতির সাপেক্ষে কুরআন শরীফের পরিবর্তন ঘটানো। তুরাবীর কাছে তাজদীদ মানে হচ্ছেঃ

The revelation in the Qur’an is the comprehensive revelation of God’s eternal truth. However, the implications of that Qur’anic message for specific peoples, times and places do change.[৩]

সুতরাং প্রত্যেক বিশ্বাসী মুসলমানকে যুগের রূপান্তরকে, ইতিহাসের রূপান্তরকে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং সেই সময় নির্ধারিত রূপান্তরকে মেনে ইসলামী নীতির ভিত্তিতে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে হবে। এর মানে হচ্ছে পরিবর্তনে সাড়া দেয়াই ইসলামের নীতি। পরিবর্তনের এই নীতিকে ইসলামের পরিভাষায় বলে ইজতিহাদ। কিন্তু তুরাবী তার সমসাময়িকদের থেকে ইজতিহাদকে মূল্যায়ন করেছেন ভিন্নভাবে।

তাঁর মতে ইজতিহাদ এমন কিছু নয় যা শুধুঃ

…to go to old books to dig out bits and pieces that we hope will help us solve today’s problems. What we need is to go back to the roots and create a revolution at the level of principles.[৪]

তুরাবীর এই চিন্তাভাবনা তাঁর পূর্ববর্তী মুজতাহিদ ও ভাবুকদের থেকে অনেকখানি ব্যতিক্রমী ও স্বাতন্ত্র্যধর্মী। তিনি পূর্ববর্তীচিন্তা থেকে অনেকখানি সরে এসেছেন। যেমন মুসলমানরা রাসূল (সঃ) এর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী সমাজকে আজও মডেল মনে করে এবং সেটির আদলে নতুন সমাজ তৈরির কথা ভাবে। কিন্তু তুরাবী বলেছেন আজকের যুগ ও বাস্তবতা সাপেক্ষে রাসূলের (সঃ) নীতির সমন্বয় করতে হবে। তাঁর ভাষায়ঃ

…although the prototype community of the Prophet offers us an ideal standard, when we use that prototype as a basis we may feel obliged to build a new model which unites the eternal principles with the changing reality.[৫]

তুরাবী পূর্ববর্তীদের থেকে সরে এসে ইজতিহাদ সম্পর্কে বলেছেন এটি এতকাল ধরে একটি বিশেষ বুদ্ধিজীবী শ্রেণী ও উলামারাই করে এসেছেন। কিন্তু কথা হচ্ছে আজকের দিনে বুদ্ধিজীবীতার এই সংজ্ঞার মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে এবং তাদের শ্রেণী ও পেশার মধ্যেও রূপান্তর ঘটেছে। তুরাবী উলা্মার সংজ্ঞাকে অনেক বিস্তৃত করে দিয়েছেনঃ

What do I mean by ulama? The word historically has come to mean those versed in the legacy of religious (revealed) knowledge (ilm). However, ilm does not mean that alone. It means anyone who knows anything well enough to relate it to God. Because all knowledge is divine and religious, a chemist, an engineer, an economist, or a jurist are all ulama. So the ulama in this broad sense, whether they are social or natural scientists, public opinion leaders or philosophers, should enlighten society.[৬]

ইজতিহাদ চর্চায় তুরাবীর এই গণতন্ত্রায়নের দাবি একালে একটা খুব উল্লেখযোগ্য বিষয়। এর মানে হচ্ছে জ্ঞানের প্রত্যেকটি শাখায় প্রবুদ্ধ মুসলমানরা ইসলামী পুনর্জীবনের লক্ষ্যে তাঁদের স্বাধীন বিচারবুদ্ধি ও মতামতের ব্যবহার করতে পারবেন। আজকের দিনে এই ধরনের পুনর্জীবন ভাবনা হতে হবে সামগ্রিক। শুধু অতীত চিন্তার পুনঃবিকরণ ও পারলৌকিক ভাবনার মধ্যে এটি সীমাবদ্ধ করা চলবে না। এটিকে জীবনের প্রতিটি স্তরে এবং দৈনন্দিন জীবনের সমস্যাগুলোর সাথে যুক্ত করে মূল্যায়ন করতে হবে। তুরাবী মনে করেন এই প্রক্রিয়া ইসলামী ব্যবস্থার অন্তর্নিহিত শক্তির অংশ এবং মুসলমানকেও আজ সেই প্রয়োজনের দায় মেটাতে হবে।

চার

তাজদীদের কথা বিবেচনা করলে হাসান আল তুরাবী ইসলামী আইন ব্যবস্থার পুনর্জীবনের দিকটা নিয়ে চিন্তাভাবনা করেছেন বেশি। এর কারণ বোধহয় তিনি ব্যক্তিগতভাবে ছিলেন আইনের ছাত্র এবং পরবর্তীকালে খার্তুম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ফ্যাকাল্টির ডীন। রাজনীতিক হিসেবে তিনি যখন সরকারে এসেছেন তখনও তিনি আইন সম্পর্কিত পদগুলোতেই অবস্থান করেছেন বেশি। প্রেসিডেন্ট নিমেরীর ন্যাশনাল রিকনসিলিয়েশন প্রোগ্রামের সাথে যুক্ত হবার পর তিনি সুদানের এটর্নি জেনারেল, পরে প্রেসিডেন্টের আইন ও পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা হন। পরবর্তীতে সংসদীয় গণতন্ত্রের সময় তাঁর ন্যাশনাল ইসলামিক ফ্রন্ট কোয়ালিশন সরকারে যোগ দিলে তিনি আইনমন্ত্রী হিসেবে কাজ করেন। এছাড়া তিনি সরকারের অনেক আইন ও সংবিধান বিষয়ক কমিটিতে কাজ করেছেন। এসব জায়গায় কাজ করার সময় তাঁর লেখালেখি ও রিপোর্টের মধ্যে আইনী ব্যবস্থার পুনর্জীবন ভাবনা বেশ স্পষ্ট। পরিবর্তনশীল সময়ের প্রেক্ষাপটে তিনি যেহেতু আইনী পুনর্জীবন চান, তাই তিনি মনে করেন কোনো বিদেশী ব্যবস্থা থেকে ধার করে নয় ইসলামের ভিতরকার শক্তি ও সম্পদ ব্যবহার করেই এটা করতে হবে।

১৯৬৫ সালে সুদান কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ হওয়ার পর সেখানকার সাংবিধানিক সংকটের প্রেক্ষাপটে গঠিত কমিটির সদস্য হিসেবে তুরাবী যে মতামত দেন তার মধ্যে এরকম অভিব্যক্তি দেখা যায়। সুদান কমিউনিস্ট পার্টি ১৯৬৪ সালে আবুদ সরকারের পতনে গুরুতপূর্ণ ভূমিকা রাখা এবং পরবর্তীতে ১৯৬৫ সালের সংসদ নির্বাচনে বেশ কয়েকটি সিট পায়। কিন্তু ব্রাদারহুডের চাপে পার্লামেন্টে কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ করে বিল পাস হয়। এ ঘটনাকে সুপ্রিম কোর্ট অসাংবিধানিক হিসেবে আখ্যায়িত করলে সেখানকার সুপ্রিম কাউন্সিল তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে সার্বিক পরিস্থিতির সাপেক্ষে রিপোর্ট দেয়ার জন্য নির্দেশ দেন, যার সদস্য হিসেবে তুরাবী কাজ করেন। কমিটির অন্যান্য সদস্যের মতো তুরাবীও আইন প্রণয়নে সংসদের চূড়ান্ত ক্ষমতার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন এবং একই সাথে তিনি রিপোর্টের সাথে যোগ করে দেনঃ

The Constituent Assembly is the agency entrusted with the exercise of the highest constitutional authority and it is an expression of the sovereignty which the constitutions establish for the Ummah after God.[৭]

এখানে তুরাবীর ‘খোদার পরে’ শব্দটার ব্যবহার লক্ষণীয়। পার্লামেন্টের সার্বভৌমত্বকে তিনি খোদায়ী কর্তৃত্বের আয়ত্তাধীন রেখেছেন যা তাঁর ইসলামী প্রত্যয়ের বহিঃপ্রকাশ। তুরাবী শুধুরিপোর্ট দিয়েই ক্ষান্ত ছিলেন না, এই সাংবিধানিক সংকটের কারণ বিশ্লেষণ করে তিনি লেখেনঃ …the Sudanese constitution is simply a collection of limbs amputated from foreign constitutions and imposed on the Sudanese people.[৮]

সুতরাং ধার করা ব্যবস্থা নয়; কার্যকর সংস্কার ও পুনর্জীবনের কাজ করতে হলে ইসলামের ভিত্তিতেই করতে হবে। এ প্রসঙ্গে তুরাবী পুনর্জীবনের জন্য দু’টি বিষয় চিহ্নিত করেছেন। একটি ফিকাহ্‌র পুনঃনির্মাণ, অপরটি শরীয়াহ্‌র বাস্তবায়ন। মুসলিম চিন্তার জগতে শরীয়াহ বিবেচিত হয় ইসলামী আইন হিসেবে যার উৎস হলো পবিত্র কুরআন ও রাসূলের (সঃ) সুন্নাত। অন্যদিকে ফিকাহ্‌ হচ্ছে শরীয়ার বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনা, বিশ্লেষণ ও তার ফলাফল। তার মানে ফিকাহ্‌ হচ্ছে মানবীয় চিন্তাপ্রসূত, শরীয়াহ ঐশী জ্ঞানলব্ধ। ফিকাহ্‌ হচ্ছে শরীয়াহ্‌র উপর ভিত্তি করে মানবীয় সমস্যার সমাধান বের করার পদ্ধতি।

তুরাবী মনে করেন প্রথম যুগের মুসলিম বুদ্ধিজীবীরা শরীয়াহ্‌র আলোচনার জন্য ফিকাহ্‌ শাস্ত্রের বিকাশ ঘটিয়ে ইসলামী জ্ঞান জগতে এক বড় ভূমিকা রেখেছিলেন। কিন্তু তাই বলেতো এক যুগের ফিকাহ্‌ দিয়ে অন্য যুগের প্রয়োজন মিটতে পারে না। তাই আজকের যুগের প্রয়োজনে শরীয়াহ্‌কে ভিত্তি করে নতুন ফিকাহ্‌র বিকাশ ঘটাতে হবে। তাছাড়া পুরানো ফিকাহ্‌ শাস্ত্রগুলোর অনেক সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে জটিলতা ও মতবিরোধের কারণ হয়ে উঠেছে। তুরাবীর ভাষায়ঃ

…the issues of the fundamental sources in the fiqh literature were considered abstractly, so that they became sterile speculative discussions which produced absolutely no fiqh at all. Even worse, it produced never ending controversy.[৯]

সুতরাং সমকালীন ইসলামী আন্দোলনের জন্য এই ফিকাহ্‌ কোন কাজে আসবে নাঃ

It is clear to the movement that fiqh which it has in its possession – however specialized its load of deductions and inferences, and however careful in its explorations and consultations – will never be adequate for the needs of the Islamic mission.[১০]

আজকের যুগের জন্য তুরাবী যে নতুন ফিকাহ্‌র কথা বলেছেন তা যেমন পুরনো ফিকাহ্‌র সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করবে তেমনি তা হবে সমস্যার সুনির্দিষ্ট উত্তর। তুরাবীর প্রস্তাবিত নতুন ফিকাহ্‌র কর্মপদ্ধতি কেমন হবে দেখা যাকঃ

Human knowledge has expanded greatly, while the old fiqh was based on knowledge that was restricted [by the conditions of its historical era] … it becomes imperative for us to adopt a new position in the fiqh of Islam so that we can utilize all knowledge for the service of God. This is a new construction which unites what exists in the transmitted traditional disciplines … with the rational sciences which are renewed every day and which are completed knowledge, we can renew our fiqh for the faith and what challenges it time after time in our contemporary life.[১১]

এই পরিপ্রেক্ষিতে তুরাবী উলামার যে নতুন সংজ্ঞা দিয়েছেন তাকে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক মনে হয়। জ্ঞানের বিভিন্ন শাখার প্রবুদ্ধ ব্যক্তিরা এই নতুন ও সমন্বিত ফিকাহ্‌ তৈরিতে এগিয়ে আসবে বলে তিনি আশা করেন। এর পাশাপাশি ফিকাহ্‌ বিকাশের স্বার্থে তিনি কিয়াসের ধারণাকে সহজীকরণের কথা বলেছেন। ইসলামের প্রথম যুগেই স্বীকৃত হয়েছিল ইসলামের মৌল পুস্তক কুরআন শরীফে নীতির কথা বলা হয়েছে কিন্তু বিভিন্ন পরিস্থিতিকে মুসলমানরা কিভাবে মোকাবিলা করবে তার সুনির্দিষ্ট উত্তর এখানে নেই। এই জন্যই ইসলামী আইনশাস্ত্রে কিয়াসের উদ্ভব হয়েছিল। যদিও পরবর্তীকালে উলামারা কিয়াসকে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছেন যা তুরাবী প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি এমন পরিস্থিতিতে কিয়াসের সীমানা প্রসারিত করার কথা বলেছেন এবং এই সূত্রে আধুনিককালে ইসলামের শুরা ব্যবস্থার পুনর্মূল্যায়নের কথাও বলেছেন।

ইসলামী আইনের ব্যাপারগুলো নিয়ে তুরাবীকে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে ভাবতে হয়েছে কেননা ইসলামী রাজনৈতিক দলের প্রধান হিসেবে সমকালীন মুসলিম সমাজে ইসলামী আইন কিভাবে প্রয়োগ করা যাবে এবং ফিকাহ্‌র কোন অংশের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পুনঃবিকরণ করা দরকার এটা তাঁর কাছে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়ায়। যদিও উনিশশো ষাটের দশকে তুরাবী যখন সুদানের রাজনীতিতে পা রাখেন তখন তাঁর মুসলিম ব্রাদারহুড ও এর রাজনৈতিক শাখা ইসলামিক চার্টার ফ্রন্টকে ইসলামী রাষ্ট্র ও ইসলামী সংবিধানের ধারণাগুলোকে লোক সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে খাটতে হয়েছে বেশি। পরে অবশ্য তুরাবী ও তাঁর দলের প্রচেষ্টায় ইসলামী সংবিধানের ধারণা সুদানী রাজনীতির প্রধান এজেন্ডায় পরিণত হয়। এর ফলে পার্লামেন্টের সংবিধান কমিটি ইসলামের নীতেকে সুদানী সংবিধানের মূল উৎস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এই স্বীকৃতির ফলে ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠা হয়ে যায় এমন নয় কিন্তু সুদানের রাজনৈতিক লড়াইয়ে ইসলামের অবস্থানকে এখন আর কেউ অস্বীকার করতে পারে না।

তুরাবী ও তাঁর ব্রাদারহুড প্রথম দিকে ধীরগতিতে অগ্রসর হওয়ার নীতি অনুসরণ করে এবং ইসলামী রাষ্ট্র ও সংবিধান প্রতিষ্ঠার আগে ব্যক্তি ও সমাজের ইসলামীকরণের উপর জোর দেয়। কারণ ব্যক্তি ও সমাজের ইসলামীকরণ ছাড়া রাষ্ট্র কর্তৃক উপর থেকে চাপানো ইসলামীকরণের বুনিয়াদ দুর্বল হওয়াই স্বাভাবিক। তুরাবী ও ব্রাদারহুডের এই ‘ধীরে চলো’ নীতি সুদানী রাজনীতির দু’টি ঘটনায় বড় রকমের ধাক্কা খায়। একটি হচ্ছে সামরিক শাসক উমর হাসান আল বশীরের ১৯৮৯ এর অভ্যুত্থান। তুরাবী, ব্রাদারহুড ও এর রাজনৈতিক শাখা ন্যাশনাল ইসলামিক ফ্রন্ট যেমন নিমেরীর ইসলামীকরণ প্রক্রিয়াকে সমর্থন দেয় তেমনি পরবর্তীতে উমর আল বশীরের সরকারের সাথেও কাজ করে। সামরিক একনাকয়দের সাথে তুরাবীর এই কাজকর্ম তাকে কিছুটা বিতর্কিত করে। তবে তুরাবীর যুক্তি ছিল। এর ফলে সুদানে ব্রাদারহুডের রাজনৈতিক কাজকর্ম করতে সুবিধা হয়। অন্যদিকে নিমেরীর ইসলামীকরণ প্রক্রিয়ার ফলে ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠার সামাজিক ভিত্তি অনেক মজবুত হয়। এমনকি নিমেরীর পতনের পরও সুদানী সমাজে ইসলামী আইনের ভূমিকাকে বাতিল বলা কারো পক্ষে সম্ভব হয়নি এবং সেই থেকে সুদানী রাজনীতিতে ইসলামী আইনের বাস্তবায়নের ধারণা মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়। অন্যদিকে তুরাবী ও তাঁর ন্যাশনাল ইসলামিক ফ্রন্টের জন্য ইসলামী আইনের পক্ষে লড়াই সহজ হয়।

পাঁচ

ষাটের দশকে তুরাবী যখন সুদানের রাজনীতিতে পা রাখেন তখন সেখানকার মেয়েরা জেনানা মহল থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে এবং তাদের সমানাধিকার অর্জনের প্রক্রিয়াটিও জোরদার হয়। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, চাকরি জীবনে মেয়েদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। কমিউনিস্টরা এইসব শিক্ষিত মেয়েদের কাছে টানতে থাকে এবং তাদের ভোট পেতে থাকে।

তুরাবী ইসলামপন্থীদের সংকট মোচনে এগিয়ে আসেন। তাঁর প্রভাবে নারীদের অধিকার বিষয়ক সুদানী মুসলিম সমাজের ঐতিহ্যবাহী ধ্যান-ধারণা বাদ দিয়ে ব্রাদারহুড ইসলামের উদারনৈতিক শিক্ষার আলোকে নারী অধিকারের প্রতি সচেতন হয়। তুরাবীর কথা হচ্ছে ইসলামে নারীর সমানাধিকার স্বীকৃত। একই সঙ্গে তিনি আধুনিকীকরণের চ্যালেঞ্জ থেকে ইসলামপন্থীদের পিছিয়ে আসার প্রবণতার তীব্র নিন্দা জানান। তুরাবী বলেন আজকের মুসলিম সমাজ নারীদের লাঞ্ছনা ও অবমাননার উৎস হচ্ছে অনৈসলামিক ও সামাজিক প্রভাব। এ প্রসঙ্গে সুদানে মহিলা ভোটারদের মন জয় করতে তখনকার ইসলামিক চার্টার ফ্রন্টের মহাসচিব তুরাবী ইসলামের উষালগ্নে উদীয়মান মুসলিম সমাজের অগ্রণী নারীদের ঐতিহ্য পুনরাবিষ্কারের উপর জোর দেন। ইসলামী মর্মবস্তুকে বজায় রেখে নারী মুক্তি আন্দোলনের এই শ্লোগান ইসলামী নারীবাদী ধারাকে পুষ্ট করে তোলে।

তুরাবী জোর দিয়ে বলেন ইসলামে নারী ও পুরুষে কোন মৌলিক তফাৎ নেই। তাঁর এই অবস্থানের পক্ষে তিনি জোরালো মতামত দেন তাঁর লেখা Women between the Teachings of Religion and the Customs of Society শীর্ষক বইয়ে। তুরাবী যেসব শক্তিশালী লেখা লিখেছেন এটা তাঁর মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট এমন মতামত অনেকের। এ বইয়ে ইসলামে নারীর ভূমিকা সম্পর্কে তুরাবী যে বিপ্লবী ভাষ্য দিয়েছেন তা রীতিমত মৌলবাদী, নারীবাদী, মার্কসবাদী সব তরফের কাছেই আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। তুরাবীর এই ভূমিকার ফলেই সুদানে মহিলা ভোটের হাওয়া ঘুরে যায় ইসলামী শক্তির পক্ষে এবং ইসলামিক আইডেন্টিটি ও নারীবাদী চেতনায় বিশ্বাসীরা সুদানে মার্কসবাদীদের ছাড়িয়ে যায়।

তুরাবী এ বইয়ে প্রথমে যুগের মুসলিম সমাজে নারীদের ভূমিকার নজির দিয়েছেন এবং এই ভূমিকাকে কুরআন ও হাদীসের নির্দেশের সাথে সমন্বয়  করে বলতে চেয়েছেনঃ

… in the religion of Islam, a women is and independent entity, and thus a fully responsible human being. Islam addresses her directly and does not approach her through the agency of Muslim males.[১২]

এর মানে হচ্ছে নারীর অধিকার ও দায়িত্বের সাথে পুরুষের অধিকার ও দায়িত্বের কোন তফাৎ নেইঃ

The verdict of Islamic jurisprudence is just the practical expression of the dictates of faith. Women, according to Shariah, are counterparts of men. And in Islamic jurisprudence, there is no separate order of regulations for them … The underlying presumption in the Shariah is that sex is immaterial.[১৩]

তুরাবী উল্লেখ করেছেন ইসলামের প্রথম যুগে নারীরা নিজের ব্যক্তিগত দায়িত্বে ইসলাম কবুল করেছেন, এমনকি বাড়ির পুরুষদেরও আগে। তারা সেদিন সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। কখনো যুদ্ধের ময়দানে, কখনো রাজনীতির অঙ্গনে। তুরাবী মনে করেন সমাজের মুক্ত অঙ্গনে শুধু পুরুষের জন্য নির্দিষ্ট হয়নি, এখানে লৈঙ্গিক পার্থক্য টানা মূর্খতা। ইসলামের প্রথম যুগের এসব মুসলিম মহিলারাই কার্যত ইসলামী আচরণ করেছেন। সমাজ জীবনে যেরকম, তেমনি ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন সম্পর্কেও একই কথা। নারী এককভাবে যে কোনো বিয়ের  প্রস্তাব গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান করতে পারে। তার নিজের সম্পত্তির পুরোপুরি দেখভাল করার ক্ষমতাও দেয়া হয়েছে পূর্ণভাবে।

তাহলে ইসলাম যদি নারীর সমানাধিকার দিয়ে থাকে সেক্ষেত্রে মুসলিম সমাজে নারীর বর্তমান লাঞ্ছনা, অবমাননার কারণ কি? তুরাবী বলেছেন মুসলমানের বিশ্বাসে যখন অবক্ষয় শুরু হলো তখনই তারা তাদের নারীদের উপর জুলুম শুরু করলো। ইসলামের প্রতি দুর্বল আনুগত্যই তাদেরকে নারীদের প্রতি অসহিষ্ণু, বেইনসাফী আচরণ করতে প্রণোদিত করলো। পরিণতিতে যা দাঁড়ালো তা হলো নারীর মৌলিক ধর্মীয় দায়িত্ব ও অধিকারকে অস্বীকার করা হলো এবং মুসলিম সমাজের মধ্যকার সমতা ও ইনসাফের ধারণা যা কিনা শরীয়াহ্‌ নির্দিষ্ট করে দিয়েছে তাকে উপেক্ষা করা হলো। এর ফলে জন্ম হলো তথাকথিত ঐতিহ্যবাহী মুসলিম সমাজের। ঐতিহাসিক অবক্ষয়ের ধাক্কায় যে তথাকথিত মুসলিম সমাজ তৈরি হয়েছে তুরাবী মনে করেন এটিকে আজ বদলে ফেলা দরকার এবং ইসলামপন্থীদের দায়িত্ব হচ্ছে সেই সংগ্রামে এগিয়ে আসা। তার কথা শোনা যাকঃ

… a revolution against the condition of women in the traditional Muslim societies is inevitable and that is the task of Islamists to close the gap between the fallen historical reality and the desired model of ideal Islam.[১৪]

তুরাবী অবশ্য সতর্ক এই কারণে যে সমাজ পরিবর্তনের প্রক্রিয়াটি একটি জটিল বিষয় বিশেষ করে এই যুগে যেখানে পশ্চিমী নীতি ও মূল্যবোধ মুসলিম সমাজের উপর আছড়ে পড়ছে এবং নির্যাতিত মুসলিম নারীদের কাছে তা একধরনের প্রলোভন ও মুক্তির উপায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। পশ্চিমী মূল্যবোধ আত্তীকৃত হওয়ার আগেই ইসলামী সংস্কারকে এগিয়ে নেয়া চাই। সেজন্য নিছক পশ্চিমী মূল্যবোধের সমালোচনা করে লাভ হবে না। অতীতকে ধরে রেখার চেষ্টা শক্তির অপব্যয় মাত্র। ইসলামবাদীরাই নারীমুক্তি আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে পারেন। আদর্শ ইসলামের দিকে যাত্রার শর্ত হচ্ছে এই প্রচেষ্টা। পশ্চিমী মতে আধুনিকতার প্রবক্তারা যাতে পরিস্থিতির ফায়দা তুলতে না পারে সেদিকে নজর দেয়াই আমাদের কর্তব্য।

মুসলিম নারীদের নিয়ে তুরাবীর বিপ্লবী চিন্তাভাবনা এবং ইসলামী আন্দোলনে তুরাবীর প্রেরণায় আরো অধিক নারীর অংশগ্রহণ তার রাজনৈতিক সাফল্যের অন্যতম কারণ। বিশেষ করে মুসলিম দুনিয়ায় তুরাবীর নারী সম্পর্কিত চিন্তাভাবনার বিপুল প্রভাব পড়েছে এবং বিভিন্ন দেশের ইসলামবাদীরা তাদের আন্দোলনে নারীর অধিক অংশগ্রহণ ও সম্পৃক্ততার ব্যাপারে উৎসাহী হয়েছে। ১৯৯২ সালে তুরাবী তাঁর নিজের সূচনা করা কর্মসূচীর মূল্যায়ন করেছেন এভাবেঃ

…in the Islamic movement I would say that women have played a more important role of late than men. They came with a vengeance because they had been deprived, and so when we allowed them in the movement, more women voted for us than men because we were the ones who gave them more recognition and a message and placed in society. They were definitely more active on our election campaigns than men. Most of our social work and charitable work was done by women. They are now even in the popular defense forces, and nobody raises questions about that … of course. I don’t claim that women have achieved parity … but there is no bar to women anywhere, and there is no complex about women being present anywhere.[১৫]

ছয়

তুরাবীর রাজনৈতিক জীবনের সাথে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। যদিও ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ ও পদ্ধতি নিয়ে ইসলামবাদীদের মধ্যে মতবিরোধ আছে। একদল মনে করেন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা প্রয়োগ করে সমাজ ও আইনের ইসলামীকরণ করতে হবে। অন্য দলের মতামত হচ্ছে ব্যক্তি ও সমাজের ইসলামীকরণের পরিণত রূপ হচ্ছে ইসলামী রাষ্ট্র। তুরাবী মোটামুটি দ্বিতীয় দলের পক্ষপাতী এবং নীতি ও তত্ত্বের দিক দিয়ে মোটামুটি একই চিন্তায় তিনি স্থিতিশীল। তাঁর অবস্থান হচ্ছেঃ

An Islamic state can not be isolated from society, because Islam is a comprehensive, integrated way of life. The division between private and public, the state and society, which is familiar in western culture, has not been known in Islam. The state is only the political expression of an Islamic society. You can not have an Islamic state except in so far as you have an Islamic society. Any attempt at establishing a political order for the establishment of a genuine Islamic society would be superimposition of laws over a reluctant society.[১৬]

তুরাবীর কথা হচ্ছে এই ইসলামীকরণকে এগিয়ে নিতে হলে সুদানের বাস্তব রাজনৈতিক পরিস্থিতির সু্যোগ নিতে হবে এবং তিনি তা করেছেন। সংসদীয় গণতন্ত্রের কালে তিনি সে প্রক্রিয়ার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত হয়েছেন এবং সংসদের ভিতরে সুদানের সাংবিধানিক ও আইনী ইসলামীকরণের প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। অন্যদিকে ইসলামীকরণের স্বার্থে তিনি সমারিক শাসকদেরও সহযোগিতা করেছেন। যদিও এই সহযোগিতাকে অনেকেই বাঁকা চোখে দেখেছেন এবং কর্তৃত্ববাদী সরকারকে বৈধতা দেয়ার জন্য তাঁকে অভিযুক্ত হতে হয়েছে।

তাত্ত্বিকভাবে চিন্তা করলে ইসলামী রাষ্ট্র বা সরকার বলতে কি বোঝায়? তুরাবী একটা মডেল খাড়া করেছেন, যদিও এ মডেল প্রশ্নোর্ধ্ব নয়। তবুও বলতে হবে ইসলামী দুনিয়ায় ইসলামী রাষ্ট্রের মডেল একালে তাঁর মত দু’ একজনই সৃষ্টি করতে পেরেছেন। এখানেই তুরাবীর সাফল্য। ইসলামবাদীরা এ মডেল থেকে অনুপ্রেরণা পাবেন। ভবিষ্যতের ইসলামবাদীরা এ মডেলের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো অতিক্রম করে নতুন মডেল উপস্থাপন করবেন এ আশা করা যায়।

তুরাবী বলেছেন ইসলামী রাষ্ট্রের মডেল হবে পুরোপুরি গণতান্ত্রিক। কোনভাবেই এটা স্বৈরাচারী বা কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থা নয়। এখানে সরকারের ভূমিকা অনেকখানি সীমিত। আইন সামাজিক নিয়ন্ত্রনের একমাত্র চাবিকাঠি নয়। নৈতিক বিধি, ব্যক্তির বিবেকবোধ – এসবেরও গুরুত্ব রয়েছে এবং এসবই স্বাধীন মতামতের ব্যাপার। ইসলামের প্রতি মননশীল মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি কি হবে তা মোটেই নিয়ন্ত্রিত বা বিধিবদ্ধ হবে না। মূল ধারণাটা হচ্ছে ইসলামী রাষ্ট্রে স্বাধীনতা গুরুত্বপূর্ণ। শুধু অমুসলিমের স্বাধীনতা নয়, মুসলমানদের মধ্যে চিন্তার বহুত্বকেও স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।

ইসলামের মূল তত্ত্বটা তৌহিদবাদী। সুতরাং ইসলামী রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব সেকুলার রাষ্ট্রের মতো নয়। ইসলামী রাষ্ট্রও সেকুলার নয়। ইসলামী রাষ্ট্রে ধর্মকে বিচ্ছিন্ন করা যাবে না। ধর্মহীনতা আত্মবিভাজন ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতার পথ পরিষ্কার করে। সুদানে তুরাবীর ইসলামী রাষ্ট্রের পরীক্ষা-নিরিক্ষার সুযোগ আসে ১৯৮৯ সালে উমর আল বশীরের নেতৃত্বে তুরাবীর অনুগত একদল সামরিক অফিসারের অভ্যুত্থানের ভিতর দিয়ে। উমর আল বশীরের সরকারে তুরাবীর ন্যাশনাল ইসলামিক ফ্রন্ট প্রধান ভুমিকা রাখে এবং তুরাবী এই সরকারের প্রধান তাত্ত্বিক ও থিংক ট্যাংক হিসেবে আবির্ভূত হন।

১৯৯৬ সালের নির্বাচনের পর তুরাবী সুদান পার্লামেন্টের স্পীকার হন এবং ১৯৯৮ সালে প্রণীত সুদানী সংবিধানে তুরাবীর চিন্তাভাবনার প্রতিফলন ঘটে। বিশেষ করে তাঁর প্রিয় তাজদীদ বা ইসলামী পুনর্জীবনের ভাবনা এখানে স্পষ্ট। তাছাড়া এ যাবৎকাল তাঁর লেখালেখি ও বক্তৃতায় যেসব বিষয় উঠে আসতো তাও এ সংবিধানে কিছুটা প্রতিফলিত হয়েছে। যেমন তিনি মুসলিম দুনিয়ার জনপ্রিয় ধারণা খেলাফতকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগণ ও ঐশী সার্বভৌমত্বের একটি সমন্বিত রূপ হিসেবে বিবেচনা করেছেন। সংবিধানের ভাষাটা পরীক্ষা করা যাকঃ

Supremacy in the state is to God, the Creator of human beings and sovereignty is to the divergent people of the Sudan who practice it as worship of God, bearing the trust, building up the country and spreading justice, freedom and public consultation.[১৭]

অথবা ইসলামের ইজমার ধরণাকে তিনি নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত জনগণের ঐকমত্য হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন – The consensus of the nation by referendum এবং এই প্রক্রিয়াকে তিনি আইনের উৎস হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

এই সংবিধানে ইসলামী আইনের সুনির্দিষ্ট ধারাগুলোও সন্নিবেশিত হয়েছে যেমন সুদ, এলকোহল ও জুয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা, রাষ্ট্রীয়ভাবে জাকাতের নীতি প্রবর্তনের মতো বিষয়গুলো। সাংবিধানিকভাবে এইসব নীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে তুরাবী তাঁর লক্ষ্যের কথা খোলামেলা প্রকাশ করেছেন।

Those in service in the state and public life shall envisage the dedication thereof for the worship of God, wherein Muslims stick to the scripture and tradition, and all shall maintain religious motivation and give due regard to such spirit in plans, laws, politics and official business in the political, economic, social and cultural fields in order to promote public life towards its objectives, and adjust them towards justice and uprightedness to be directed towards the grace of God in the hereafter.[১৮]

এটা হচ্ছে সেকুলারিজমকে প্রত্যাখ্যান করার সাংবিধানিক ভাষা। কিন্তু এই সংবিধানের ব্যবহারযোগ্যতা নিয়ে একটি প্রশ্ন বরাবর ছিল। কারণ সুদান মূলত ইসলামিক ও খ্রিষ্টিয় ধারায় বিভক্ত একটি জাতি রাষ্ট্র। সার্বিকভাবে সুদানে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও এর দক্ষিণাংশে বিপুলসংখ্যক খ্রিষ্টান ও আদিবাসীদের বাস। সুতরাং সংবিধানের ইসলামী ধারাগুলোকে অমুসলিমদের উপর ব্যবহার করা হবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়। সংবিধানের ধারাটা পরীক্ষা করা যাকঃ

The effectiveness of some laws shall be subject to territorial limitations, considering the prevalence of certain religions or cultures in the areas at variance with the religion dominant in the country at large … In there matters exclusive local rules can be established in the area based on the local majority mandate … Thus the legislative authority of any region predominantly inhabited by non-Muslims can take exception to the general operation of the national law, with respect to any rule of a criminal or penal nature derived directly and solely from a text in the Shariah contrary to the local culture.[১৯]

সুতরাং একটা ইসলামী রাষ্ট্রেও অমুসলমানদের মূলস্রোতের সাথে আত্তীকরণ করা যেতে পারে বলেই তুরাবী মনে করেন।

 সাত

উমর আল বশীরের সাথে দীর্ঘ এক দশক ধরে তুরাবীর এইসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল কি তা একটু বিবেচনা করা যেতে পারে। আপাতদৃষ্টিতে তুরাবীর ইসলামী রাষ্ট্র মুসলিম বিশ্বে তেমন কোনো জোরালো প্রভাব ফেলতে পারেনি বলে মনে হয়। এর কারণ তুরাবীর রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জনের সময় বিশ্বপরিস্থিতি মোটেই তাঁর অনুকূলে ছিল না। পশ্চিমী রাষ্ট্রসমূহ একযোগে তুরাবীর সাথে শত্রুতা শুরু করে পাশাপাশি তারাই সুদানের দক্ষিণাঞ্চেলের খ্রিষ্টানদের মুসলিম প্রধান উত্তরের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দেয়। মুসলমান-খ্রিষ্টান দাঙ্গা ও গৃহযুদ্ধ সুদানের ঐক্য ও সংহতি একেবারে ঝাঁঝড়া করে দেয়। এ ছাড়া সুদানের প্রধান বিরোধী দলগুলোও তুরাবীর ইসলামীকরণের ধারণায় কখনো ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারেনি। উল্টো নানা ইস্যুতে তারা তুরাবীর বিরোধিতা করতে ছাড়েনি। এসব কারণে তুরাবীর বিকশিত রাজনৈতিক ব্যবস্থার কার্যকারিতা বিচার করা বেশ কঠিন এবং শেষমেষ কার্যত আমেরিকার চাপে প্রেসিডেন্ট উমর আল বশীর তুরাবীকে তাঁর পদ থেকে ১৯৯৯ সালে সরিয়ে দেন। একালে ইসলামী নবচেতনাবাহীদের অন্যতম পুরোধা তুরাবীর নেতৃত্বে সুদানে যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়েছিল তাঁর জন্য এটা একটি বড় বিপর্যয় বটে। অনেকের মতে তুরাবীর সামরিক গণতান্ত্রিকভাবে তাঁর লক্ষ্য পূরণের দিকে অগ্রসর হওয়া উচিত ছিল। তাহলে তাঁকে আর পিছনে ফিরে তাকানোর প্রয়োজন হতো না।

তারপরেও বলা হয় তুরাবী আজীবন একজন সৃষ্টিশীল ও মননশীল মানুষ। মুসলিম বিশ্বে তাঁর সুগভীর মনীষা ও মননসমৃদ্ধ ধ্যান-ধারণার একটা বড় প্রভাব পড়েছে এবং তাঁর লেখালেখি ও চিন্তাভাবনার অনুসারী একদল মানুষও তৈরি হয়েছে। ইসলামী আন্দোলনের ভবিষ্যৎ পথ চলায় এটা একটি ইতিবাচক সংযোজন বলে ধরে নেওয়া যায়।

গ্রন্থঋণঃ
[১]  John L. Esposito and John O. Voll, Makers of Contemporary Islam. New York; Oxford University Press, 2001.
[২]  প্রাগুক্ত।

[৩] প্রাগুক্ত।
[৪]  Abdel Wahab El-Affendi, Turabi’s Revolution: Islam and Power in Sudan. London: Grey Seal, 1991.
[৫]  প্রাগুক্ত।
[৬]  Hasan Turabi, “The Islamic State”, in Voices of Resurgent Islam. Ed, John L. Esposito. New York: Oxford University Press, 1983.
[৭] Quoted in John L. Esposito and John O. Voll, Makers of Contemporary Islam.
[৮]  প্রাগুক্ত।
[৯]  প্রাগুক্ত।
[১০] প্রাগুক্ত।
[১১] প্রাগুক্ত।
[১২] Hasan Turabi, Women in Islam and Muslim Society. London: Mile Stones, 1991.
[১৩]  প্রাগুক্ত।
[১৪]  প্রাগুক্ত।
[১৫] In Arthur L. Lowrie, ed., Islam, Democracy, the State and the West : A Roundtable with Dr. Hasan Turabi. Tampa, FL : World and Islam Studies Enterprise, 1993.
[১৬] Hasan Turabi, “Principles of Governance, Freedom, and Responsibility in Islam”, American Journal of Islamic Social Sciences 4,1 (1987):1.
[১৭] Quoted in John L. Esposito and John O. Voll, Makers of Contemporary Islam.
[১৮] প্রাগুক্ত।
[১৯] প্রাগুক্ত।
সূত্রঃ বাংলা সাহিত্য পরিষদ কর্তৃক প্রকাশিত “উত্তর আধুনিক মুসলিম মন” গ্রন্থ

১৪৮৩

বার পঠিত

ফাহমিদ-উর-রহমান

ফাহমিদ-উর-রহমান একজন মননশীল প্রাবন্ধিক ও বুদ্ধিজীবী। পেশায় মনোরোগ বিশেষজ্ঞ হলেও ইতিহাস, সংস্কৃতি, ধর্ম, সমাজ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে তিনি লিখছেন। সমাজ ও সংস্কৃতি সচেতন বিধায় তিনি আধুনিকতার সমস্যা নিয়ে লিখেছেন। আধুনিকতা ও সাম্রাজ্যবাদের সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ নিয়েও তিনি কথা বলেছেন। তার ঋদ্ধ লেখালেখি নতুন আঙ্গিকে বাঙালি মুসলমানের জাতিসত্তার উপরে আলোকপাত করেছে। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের নামঃ ১। ইকবাল মননে অন্বেষণে (১৯৯৫) ২। অন্য আলোয় দেখা (২০০২) ৩। উত্তর আধুনিকতা (২০০৬) ৪। সেকুলারিজমের সত্য মিথ্যা (২০০৮) ৫। উত্তর আধুনিক মুসলিম মন (২০১০) ৬। সাম্রাজ্যবাদ (২০১২) ৭। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ (২০১৩) ৮। সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ও বাংলাদেশ (২০১৪) পাশাপাশি তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে ১। জামাল উদ্দীন আফগানী: নব প্রভাতের সূর্য পুরুষ (২০০৩) ২। মহাবিদ্রোহ ১৮৫৭ (২০০৯) ৩। ফরায়েজী আন্দোলন : আত্মসত্তার রাজনীতি (২০১১)