বায়তুল্ মাল তহবীল (পর্ব-২)

প্রথম পর্বঃ বায়তুল্ মাল তহবীল

“৫” জাকাত কাহাদের প্রাপ্য?

সূরা তাওবার ৬০ আয়তে বর্ণিত হইয়াছে- অনুবাদ- “নিশ্চয় ছাদাকাগুলি প্রাপ্য হইতেছে কেবল অভাবগ্রস্তদিগের এবং নিঃস্বদিগের এবং ছাদাকা সম্বন্ধীয় কর্ম্মচারীদিগের এবং হৃদয় বিনোদন করা হইয়াছে যাহাদের এবং গর্দ্দান খালাসীর কার্য্যে এবং ঋণগ্রস্থদিগের জন্য এবং আল্লাহর রাহে এবং [দুঃস্থ] পথিকদিগের জন্যে। আল্লাহর হুজুর হইতে নির্দ্ধারিত ফরজ [ordinance] হিসাবে। আর আল্লাহ হইতেছেন জ্ঞানময় প্রজ্ঞাময়।”

আয়তটি যে জাকাত প্রভৃতির ফরজ ছাদাকা সম্বন্ধে বর্ণিত হইয়াছে, উহার শেষ বর্ণনা হইতেই তাহা স্পষ্টভাবে জানা যাইতেছে। আয়াতে আট শ্রেণীর লোককে জাকাত পাওয়ার নায্য অধিকারী বলিয়া উল্লেখ করা হইয়াছে। যথাঃ-

১. ফোকারা- ফকীর শব্দের বহু বচন। ফক্‌র শব্দ হইতে উৎপন্ন। ফক্‌র শব্দের ধাতুগত অর্থ, মেরুদন্ডের হাড় ভাঙ্গিয়া যাওয়া। ফকীর বলিতে একেবারে নিঃস্ব ব্যক্তিকে বুঝায় না। নিঃস্ব না হইলেও নানা প্রকার প্রতিকূল অবস্থার আঘাতে আঘাতে সে দারুণ অভাবগ্রস্থ হইয়া পড়িয়াছে। অন্ধ, খঞ্জ প্রভৃতি বিকলাঙ্গ ব্যক্তিগণও এই শ্রেণীর অন্তর্গত।

২. মাছাকীন- এক বচনে মিছকীন। ধাতুগত অর্থ অচল, স্থবির প্রভৃতি। মিছকীন বলিতে একেবারে নিঃস্ব ব্যক্তিদিগকে বুঝাইয়া থাকে।

৩. আমেলীন- এক বচনে আমেল। আমেল অর্থে কর্ম্মচারী। জাকাতের কাজে অর্থাৎ তাহার সংগ্রহ ও বন্টনের অথবা হিসাবপত্র রাখার জন্য যেসব কর্ম্মচারী নিযুক্ত হইবে, বায়তুলমাল তহবিলের এক অংশ হইতে তাহাদের establishment খরচা প্রদান করিতে হইবে, যাহাতে নিয়ম ও শৃঙ্খলার সহিত এই বিভাগের কাজ সুপরিচালিত হইতে থাকে।

৪. যাহাদের অন্তর সত্যের প্রতি অনুরাগী, কিন্তু এছলাম ধর্ম্ম বা মুছলমান জাতির কোন প্রকার খেদমত করিতে পারে না- তাহাদের সাহায্যের জন্য বায়তুল মালের এক অংশ নির্দ্ধারিত হইয়া আছে। এছলাম গ্রহণের ফলে যাহাদিগকে নিজেদের বিষয়-বিত্ত হইতে বঞ্চিত হইতে হইয়াছে, আবশ্যক হইলে তাহাদিগকেও এই অংশ হইতে সাহায্য করা যাইতে পারে।

৫. ফির-রেকাব- ইহার অর্থ “দাস মুক্তির কার্য্য।” ক্রীতদাসের মালেকদিগকে অর্থ দিয়া তাহার বিনিময়ে তাহাদিগকে আজাদ করাইয়া দেওয়ার জন্য এই অংশ নির্দ্ধারিত। দাস প্রথার বিশ্বব্যাপী অভিশাপের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সাড়ে তেরশত বৎসর পূর্ব্বে এছলাম যে সক্রিয় অভিযান উপস্থিত করিয়াছিল, কোরআনের এই বিধানটি তাহারই একটা অংশ।

৬. গারেমীন- গারেম শব্দের বহু বচন। ইহার অর্থ ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিগণ। সমাজের ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিদিগকে ঋণ মুক্ত করিয়া দেওয়ার জন্য বায়তুল মাল তহবিলের এক অংশ ব্যয় করা আবশ্যক। বলা আবশ্যক, ঋণগ্রস্তকে এই সাহায্য ঋণ হিসাবে দেওয়া হয় না। ফলে এই টাকা তাহাকে পরিশোধ করিতে হয় না। সমাজ হইতে ঋণ ও অন্যান্য প্রকারের সব দৈন্য ও সমস্ত অভাবের মূল উৎপাটন করিয়া দেওয়াই এছলামের আদর্শ। সেই জন্য বায়তুল মাল তহবিলের কোন সাহায্যই প্রাপককে পরিশোধ করিতে হয় না।

৭. ফি ছাবিলিল্লাহ- শাব্দিক অর্থ “আল্লাহর রাহে” কোরআনের পরিভাষায় ইহার অর্থ হইতেছে জেহাদ। জেহাদের জন্য প্রস্তুত হওয়া হুকুমতের কাজ সন্দেহ নাই। কিন্তু হুকুমতের পক্ষে সব সময়ে ও সকল ক্ষেত্রে সর্ব্বব্যাপকভাবে ইহার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয় না। এইজন্য সবসময়ে ও সকল অঞ্চলের মুছলমানদিগের জেহাদের শিক্ষা দেওয়া এবং দুশমনের মোকাবেলার জন্য জাতিকে সমগ্রভাবে প্রস্তুত করিয়া রাখা সামাজিকভাবে মুছলমানের কর্ত্তব্য। তাই বায়তুল মাল তহবিলের একটা অংশ এই সামাজিক কর্ত্তব্যের জন্য ব্যয় করার আলোচ্য নির্দ্দেশ।

৮. এবনুছ-ছাবিল- শাব্দিক অর্থ পথের সন্তান। পারিভাষিক অর্থ পথিক বা মুছাফির। বলা বাহুল্য, দুঃস্থ মুছাফেরদিগের উদ্দ্যেশই এই নির্দ্দেশ দেওয়া হইয়াছে। কোন লোকের পক্ষে অন্যত্র ছফর করা নিতান্ত আবশ্যক, অথচ অর্থাভাবে যাইতে পারিতেছে না, এই শ্রেণীর লোকও এই পর্যায়ের অন্তর্ভূক্ত।

আলোচন্য বিষয় সম্বন্ধে অন্য প্রসঙ্গের অবতারণা করার পূর্বে দুইটি জরুরী বিষয়ের প্রতি পাঠকগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করিতে চাই। ইহার মধ্যে প্রথমটি হইতেছে আয়তের বর্ণনাভঙ্গী সম্বন্ধে। পাঠক দেখিতেছেন, আট শ্রেণীর প্রাপক সম্বন্ধে আয়তের সর্ব্বত্র একভাষা ব্যবহার করা হয় নাই। পঞ্চম ও সপ্তম শ্রেণীর উল্লেখ পূর্ব্বে “ফী” ব্যবহার করা হইয়াছে। পক্ষান্তরে অবশিষ্ট ছয় শ্রেণীর উল্লেখ করা হইয়াছে, “লামের” অন্তর্গত করিয়া। এমাম রাজী বলিতেছেন, ইহা লামে তামলীক- অর্থাৎ এই ছয় শ্রেণীর প্রাপকরা, প্রাপ্ত অর্থের মালেক হইয়া যাইবেন, সুতরাং নিজেদের ইচ্ছা অনুসারে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে তাহা ভোগ-দখর করিতে পারিবে। কিন্তু পঞ্চম ও সপ্তম শ্রেণীতে নির্দ্দেশ দেওয়া হইয়াছে দুইটি কাজে সাহায্য করার এবং এই জন্যই তাহার পূর্বে “ফী” ব্যবহার হইয়াছে। সুতরাং এই দুইটি কাজের জন্য দুইটি প্রতিষ্ঠান [institution] স্বতন্ত্রভাবে গঠিত হওয়া আবশ্যক। দাস মুক্তির কর্ত্তব্য এখন আর বাকী নাই। সুতরাং জেহাদের জন্য কোন প্রকারের একটা প্রতিষ্ঠান বিদ্যমান থাকার দরকার হইবে। মুছিলমানদিগকে জেহাদের জন্য প্রস্তুত করার এই দায়িত্ব যদি সরকার গ্রহণ করেন, তাহা হইলে এই অংশের টাকাও তাঁহাদের তহবিলেই জমা হইবে। আর যদি এসম্বন্ধে তাহাদের চক্ষুলজ্জা বোধ হয়, তাহা হইলে national institution গঠন করিয়া জাতিকে তাহার মধ্যবর্ত্তিতায় এই কর্র্ত্তব্য সম্পন্ন করিতে হইবে।

দ্বিতীয় প্রসঙ্গে একটা আভাস পূর্ব্বেও দিয়াছি। পাঠক দেখিতেছেন দুঃস্থ ও অভাবগ্রস্তকে সাহায্য করিয়া এছলাম তাহার পরিবর্ত্তে কোন বিনিময় চাহিতেছেন না। “pay according to work” এছলামের নীতি নহে বরং “pay according to need”ই হইতেছে তাহার আদর্শ। মানুষকে শুধু অভাবমুক্ত করিয়া ছাড়িয়া দেওয়াও বায়তুল মালের উদ্দেশ্য নহে; বরং অভাবমুক্ত করিয়া দেওয়ার পর তাহার জন্য জীবনযাত্রার একটা সম্বলও এছলাম করিয়া দিতে চায়।

আয়তে আট শ্রেণীর প্রাপকের উল্লেখ আছে। ইহার অর্থ এই যে, বায়তুল মাল তহবিলের ব্যয় এই আট শ্রেণীর মধ্যে সীমাবদ্ধ করিয়া রাখিতে হইবে- তাহার বাহিরের কাহাকেও দেওয়া হইবে না। কিন্তু সমাজের মঙ্গলের আবশ্যক হইলে অপেক্ষাকৃত অল্পসংখ্যক শ্রেণীর মধ্যেই তহবিলের সমস্ত টাকা ব্যয় করা যাইতে পারিবে। যেমন ঋণগ্রস্ত হিসাবে একশত টাকা দিয়া একজনের ঋণ পরিশোধ করিয়া দেওয়া হইল, কিন্তু দরকার হইলে অভাবগ্রস্ত ও নিঃস্ব হিসাবে আরও দুইশত টাকা তাহাকে দেওয়া যাইতে পারে। আর প্রকৃত কথা এই যে কোরআনের বর্ণিত আট শ্রেণী মূলতঃ একই শ্রেণী এবং তাহা হইতেছে নিঃস্ব ও অভাব জর্জ্জরিত মানুষের শ্রেণী। এই শ্রেণীকে অভাবের দায় হইতে মুক্ত করিয়া আবার সমাজ জীবনে আনন্দের ও গৌরবের আসনে প্রতিষ্ঠিত করিয়া দেওয়াই হইতেছে এছলামের সর্ব্বপ্রধান আদর্শ এবং বায়তুল মাল তহবিল প্রতিষ্ঠা হইতেছে সেই আদর্শ সাধনার বাস্তব দিকের একটা মাত্র জীবন্ত উদাহরণ।

‘’৬’’

জাকাত সংগ্রহের ব্যবস্থা

এছলামের হুকুমতের মূল মালেক হইতেছেন আল্লাহ। তাঁহার রাজত্বের অংশী বা শরীক আর কেহই নাই। এই হুকুমত পরিচালনা করার দায়িত্ব অর্পিত হইয়াছে উম্মতে মোহাম্মদীর বা তাহার মনোনীত প্রতিনিধিগণের উপর। এই প্রতিনিধিরাই জমাতের ছরদার ও অধিনায়কদিগকে মনোনীত করিবেন। এই ছরদার ও অধিকায়গণই অবস্থাভেদে আমীর, এমাম বা Head of the state প্রভৃতিকে নির্ব্বাচিত করিবেন। মোছলেম জাতির সমস্ত ধর্ম্মীয়, রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক ব্যবস্থা পরিচালিত হইবে এই জামাআতের ও তাহার ছরদারগণের নির্দ্দেশ অনুসারে। ইহাই কোরআনের স্পষ্ট ও অপরিহার্য নির্দ্দেশ।

এই সাধারণ ও ব্যাপক নির্দ্দেশ অনুসারে, জাকাত আদায় করার ও প্রাপকদিগের মধ্যে তাহা বন্টন করিয়া দেওয়ার সমস্ত কর্ত্তব্য ও দায়িত্ব নিঃসন্দেহভাবে ন্যস্ত হইয়া আছে এছলামী হুকুমতের উপর স্বতঃসিদ্ধভাবে। দুঃখের বিষয়, এ সম্বন্ধেও কোনো কোনো অঞ্চল হইতে জিজ্ঞাসা উঠান হইয়াছে সন্দেহের সুরে। কারণ, এছলামী হুকুমতের অস্তিত্ব দেশ হইতে বহু পূর্ব্বে বিলুপ্ত হইয়া পড়িয়াছিল, তাহার ফলে অনেকে এযাবত জাকাত দেওয়ার দরকারই মনে করেন নাই। যাঁহারা দিয়াছেন, তাঁহাদের একদল আবার হিসাব-কিতাবের ধার না ধারিয়া নিজের খেয়াল-খুশীমত বেল-মোক্তা কিছু টাকা বাহির করিয়া সঙ্গত বা অসঙ্গতভাবে বিতরণ করিয়া দিয়াছেন। বহু ক্ষেত্রে ফরজ জাকাত নিষ্ঠুরভাবে বিতাড়িত হইয়াছে নফল ছাদাকা-খয়রাতের মতো করিয়া। অনেক সময় আবার জাকাত বন্টনের সমারোহের মধ্য দিয়া, একটা চাপা অহঙ্কারের ভাবও আমাদের মনের কোণে সজাগ হইয়া উঠিয়াছে।

দীর্ঘ দিনের এইসব অসঙ্গত অভ্যাসের ফলেই যে আজ মুছলমান সমাজের কোনো কোনো স্তরে এই শ্রেণীর একটা জিজ্ঞাসা জাগিয়া উঠিয়াছে, তাহা দৃঢ়তার সহিত বলা যাইতে পারে। অথচ, ছুরা তাওবার যে আয়তটিকে জাকাত সম্বন্ধে আল্লার চরম নির্দ্দেশ বলিয়া সমবেতভাবে গ্রহণ করা হইতেছে, তাহাতেও ইহার স্পষ্ট ও অকাট্য প্রমাণ বিদ্যমান আছে। এই আয়তে বলা হইয়াছে- “নিশ্চয় ছাদাকাগুলি পাওয়ার অধিকারী হইতেছে ফকীরগণ, মিছকীনগণ ও ছাদাকা সম্বন্ধে নিয়োজিত কর্ম্মচারীগণ”- ইত্যাদি। জাকাতের মাল যে আট শ্রেণীর লোকদিগের মধ্যে ব্যয় করার আদেশ আয়াতে দেওয়া হইয়াছে, জাকাত সংগ্রহ করার কাজে নিযুক্ত কর্ম্মচারীরাও তাহার মধ্যকার অন্যতম। সুতরাং নিজের জাকাত নিজের হাতে রাখিয়া নেওয়ার বা নিজের ইচ্ছা অনুসারে যত্রতত্র ব্যয় করিয়া ফেরার অধিকার কোনো মুছলমানেরই নাই। উপরের বর্ণিত আয়তের কিছু পরে ঐ ছুরা তাওবার ১০৩ আয়তে আল্লাহতাআলা তাঁহার রছুল হজরত মোহাম্মদ মোস্তফাকে নির্দ্দেশ দিতেছেন-

“তুমি তাহাদের ধন-সম্পদের মধ্যে হইতে কিছু অংশ ছাদাকা হিসাবে গ্রহণ কর- যাহা দ্বারা তুমি তাহাদিগকে বিশুদ্ধ ও নির্ম্মল করিয়া নিবে, আর [জাকাত গ্রহণের পর] তাহাদিগের প্রতি তুমি আশীর্বাদ করিবে, নিশ্চয় তোমার আশীর্বাদ হইতেছে তাহাদের পক্ষে শান্তিকর, এবং আল্লাহ হইতেছেন সর্ব্বশ্রোতা, সর্ব্বজ্ঞাতা।”

আয়তে হজরত রছুলে করিমকে মুছলমানদের নিকট হইতে জাকাত আদায় করিয়া লওয়ার হুকুম দেওয়া হইয়াছে, তাহাদিগকে নিজ নিজ ইচ্ছামতে জাকাতের মালগুলি নফল ছাদাকা খয়রাতের মত ব্যক্তিগতভাবে ব্যয় করিবার অনুমতি দেওয়ার নির্দ্দেশ এই আয়াতে হজরত রছুলে করিমকে দেওয়া হয় নাই।

হানাফী মাজহাবের বিখ্যাত এমাম ও মোজতাহেদ আবুবাকর রাজী [জাচ্ছাছ] আহকামুল কোরআন পুস্তকে এই আয়তের তফছীরে লিখেতেছেনঃ “তাহাদের ধন-সম্পদের মধ্য হইতে এক অংশ জাকাত হিসাবে গ্রহণ কর” আল্লার এই নির্দ্দেশ হইতে প্রতিপন্ন হইতেছে যে, জাকাত আদায় করার অধিকার এমামের হাতে ন্যস্ত হইয়াছে। সুতরাং যে ব্যক্তির উপর জাকাত দেওয়া ওয়াজেব, সে যদি নিজেই তাহা মিছকীনদিগের মধ্যে বন্টন করিয়া দেয়, তাহাতে সে জাকাত উসুল দেওয়ার দায়িত্ব হইতে রেহাই পাইবে না, কারণ জাকাত আদায় করার ব্যাপারে এমামের যে অধিকার, তাহা বলবৎ আছে। সুতরাং তাহা রহিত করিয়া দেওয়ার কোনই উপায় নাই। [৩-১৫৫]। এই আয়তে ছাদাকা বলিতে যে ফরজ জাকাতকেই বুঝাইতেছে, এই পুস্তকের অন্যস্ত [৩-১৪৮] তাহাও অকাট্যরূপে সপ্রমাণ করিয়াছেন। বলা বাহুল্য, ইহাই একমাত্র যুক্তিযুক্ত অভিমত।

পাঠক দেখিয়াছেন, ছাহাবী মাআজ এবনে জাবলকে আমেল বানাইয়া এমনে পাঠাইবার সময় হজরত রছুলে করিম জাকাত সম্বন্ধে তাহাকে বলিয়া দিতেছেন, অতঃপর তাহাদিগকে ফরজ জাকাত সম্বন্ধে বলিয়া দিবে যে, “উহা গ্রহণ করা হইবে তাহাদিগের অবস্থাপন্ন লোকদের নিকট হইতে, তৎপরে তাহা ফিরাইয়া দেওয়া হইবে তাহাদের মধ্যকার অভাবগ্রস্ত লোকদিগকে।” হযরত রছুলে করিমের সময় সর্ব্বতোভাবে এই নীতির উপর আমল হইয়াছিল।

হজরত রছুলে করিমের এন্তেকালের পর, এছলামের প্রথম খলিফা আবুবাকর ছিদ্দিক একটি বিদ্রোহী আরব গোত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করিয়াছিলেন। এই গোত্রগুলি জাকাত দিতে অস্বীকার করিয়াছিল, সাধারণতঃ এইরূপ কথাই আমরা বরিয়া ও বিশ্বাস করিয়া থাকি। কিন্তু নিজের সামান্য শক্তি অনুসারে আমি যতটুকু আলোচনা করিতে সমর্থ হইয়াছি, তাহাতে আমার বিশ্বাস এই দাঁড়াইয়াছে যে, আলোচ্য বিদ্রোহীরা জাকাতকে আল্লার ফরজ বলিয়া মান্য করিতে অস্বীকার করে নাই। জাকাত দেওয়াতেও তাহাদের আপত্তি ছিল না। মুছলমানের ছদ্মবেশে একদল মোনাফেক চিরকালই আমাদের সমাজে লুকাইয়া আছে। হজর রছুলে করিমের এন্তেকালের সুযোগ নিয়া তাহারা জনসাধারণকে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে উস্কানী দিতে আরম্ভ করিল। জাকাত দেওয়ার সময় আসিলে তাহারা জনসাধারণকে বলিতে আরম্ভ করিল যে হজরত রছুলে করিম যতদিন ছালামত ছিলেন, ততদিনের কথাই ছিল অন্য। কিন্তু এখন আমরা সব বিষয় আগের মত মদীনার কেন্দ্রকে স্বীকার করিয়া চলিব, ইহার কারণ কিছুই নাই। আমাদের অঞ্চলের জাকাত আমরা নিজেরাই সংগ্রহ করিব, নিজেরাই তাহা সঞ্চয় করিয়া রাখিব এবং নিজেরাই তাহা যথাসময়ে যথাযোগ্য ব্যক্তিগণের মধ্যে বন্টন করিয়া দিব। মদীনার কেন্দ্র হইতেও তো অবশেষে ইহাই করা হইবে। তবে আর এত হাঙ্গামা ও অপব্যয় করার দরকার কি? সরল বিশ্বাসী মুছলমান জনসাধারণ ইহার মধ্যে দোষের কথা কিছুই দেখিতে পায় নাই। মুছলমানদের জাতীয় মেরুদণ্ডের উপর আঘাত হানাই যে দুষ্ট দলের উদ্দেশ্য, তাহার অধিকাংশ তাহাই বুঝিতে পারে নাই। প্রকৃতপক্ষে, জাকাতের মাল সে অঞ্চলে সংগৃহীত হইয়া গিয়াছিল এবং তাহা মদীনার কেন্দ্রীয় অফিসে জমা দেওয়ারও আয়োজন হইতেছিল। ঠিক এই সময় তাহাদের উপরের স্তরে এই প্রচারণা আরম্ভ হইয়া যায়। অবশেষে তাহাদের ছরদার মালেক এবনে নোয়ায়রা সেখানকার সমস্ত জাকাত স্থানীয় লোকদিগের মধ্যে বন্টন করিয়া দেয়।

পাঠক দেখিতেছেন, আলোচ্য গোত্রের লোকগুলি সকলেই মুছলমান ছিল, জাকাত দিতেও তাহাদের আপত্তি ছিল না। কিন্তু কেতাবুল্লাহ ও ছুন্নাতে রছুলুল্লার যে নিয়ম, নীতি ও আদর্শগুলি হইতেছে সর্ব্বকারের এছলামী হুকুমতের প্রধানতম অবলম্বনস্বরূপ, আলোচ্য আরবগোত্রগুলি সেই জামাআতী নেজামের বিরুদ্ধেই বিদ্রোহ উপস্থিত করিয়াছিল, ব্যক্তিকে জাতির উপরে তুরিয়া ধরার চেষ্টা করিয়াছিল, এবং ইহারই উপক্রম হিসাবে হুকুমতের হাতে জাকাত সমর্পণ করিতে অস্বীকার করিয়াছিল। এই জন্যই হজরত আবুবাকর তাহাদের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করা আবশ্যক মনে করিয়াছিলেন। এবং এই জন্যই ছাহাবারা সকলে সমবেতভাবে তাঁহার এই সিদ্ধান্তের সমর্থন করিয়াছিলেন। জাকাত যে মুছলমান কওমের একটা অত্যাবশ্যকীয় প্রতিষ্ঠান [National Institution], এবং এছলামী হুকুমতই যে তাহা আদায় ও বন্টন করার একমাত্র অধিকারী, হজরত আবুবাকরের সিদ্ধান্তের ও ছাহাবাগণের এজমা’র এই নজীরেও তাহার প্রমাণ পাওয়া যাইতেছে।

হাদিছের কেতাবগুলির জাকাত সংক্রান্ত বিভিন্ন অধ্যায় মনোযোগের সহিত পাঠ করিলে সকলেই দেখিতে পাইবেন যে, হজরত রছুলে করিম, বহু ছাহাবীকে জাকাত সংগ্রহের জন্য নিযুক্ত করিয়াছিলেন। জাকাত সংগ্রহকারী কর্ম্মচারীদিগের কর্ত্তব্যগুলিও তিনি নির্ধারণ করিয়া দিয়াছেন। পাঠকগণ অবগত আছেন যে, আমরা জাতি হিসাবে আদর্শ প্রস্তাবকে সমবেতভাবে গ্রহণ করিয়াছি, নিজেদের জীবনকে আল্লাহর কিতাব ও রছুলের ছুন্নাৎ অনুসারে সংগঠিত করিয়া নেওয়ার মহান উদ্দেশ্যে। আমরা উপরে সেই কেতাব ও ছুন্নাহ হইতে প্রতিপন্ন করিয়াছি যে, জাকাত সংগ্রহ করার এবং যথাযোগ্য পাত্রে জাকাতের মালকে বন্টন করিয়া দেওয়ার অধিকার, দায়িত্ব ও কর্ত্তব্য এছলামী হুকুমতের উপর নিব্যুঢ়ভাবে ন্যস্ত হইয়া আছে। পক্ষান্তরে কোন মুছলমানের পক্ষে নিজের জাকাতকে ব্যক্তিগতভাবে বন্টন করার অধিকার বা অনুমতি কেতাব ও ছুন্নার কুত্রাপি দেওয়া হয় নাই। এ জন্য খোলাফায়ে রাশেদীনের শাসন-ইতিহাসে, এই নিয়ম ও নীতির কোন ব্যতিক্রম দেখিতে পাওয়া যায় না।

জাকাতের প্রাপকগণকে কোরআনে আট শ্রেণীতে বিভক্ত করা হইয়াছে, ইহা আমরা পূর্ব্বেই দেখিয়াছি। এই শ্রেণীবিভাগের সার কথা হইতেছে তিনটাঃ

১. অভাবের মূল কারণগুলিকে দূর করিয়া দিয়া সমাজের দুঃস্থ ব্যক্তিগণকে অভাবের গ্রাস হইতে মুক্ত করিয়া দেওয়া। ফকীর, মিছকীন, করজদার, বিপন্ন মোছাফের, ক্রীতদাস প্রভৃতি সমস্তই এই পর্যায়ভুক্ত।

২. ফি-ছাবিলিল্লাহ বা জেহাদ। কোরআনে ফি-ছাবিলিল্লাহ [খোদার রাহে] পদটি একমাত্র জেহাদের অর্থেই ব্যবহৃত হইয়াছে, অন্য কোন অর্থে ব্যবহৃত হয় নাই। যতদূর মনে পড়ে, এমাম রাজীও এই অভিমত প্রকাশ করিয়াছেন। জাকাতের আলোচ্য আয়ত সম্বন্ধে হানাফী মজহাবের ফেকাহের কেতাবগুলিতেও এই মতের সমর্থন করা হইয়াছে। মাওলানা বাহরূলওলুম আয়াতের ফি-ছাবিলিল্লাহ পদ সম্বন্ধে লিখিতেছেন- “ছাবিলিল্লাহ’- পদটি যদিও সাধারণভাবে সমস্ত সৎকর্ম্মকেই বুঝাইয়া থাকে, কিন্তু আয়তে উহা একটা বিশেষ শ্রেণীর সৎকর্ম্মকেই বুঝাইতেছে এবং এসম্বন্ধে ‘এজমা’ হইয়া গিয়াছে। [আরকানে আরবাআ,- ৪৭]।

৩. জাকাত বিভাগের কর্ম্মচারীদিগের বেতন ও তাহার সরঞ্জামী খরচ। তহবিলের মোট আয়ের এক অষ্টমাংশ পর্যন্ত এই বাবদে ব্যয় করা যাইতে পারিবে। এই শ্রেণী স্থায়ী ও ব্যাপক প্রতিষ্ঠান একজন স্বেচ্ছাসেবক বা অনারারী কর্ম্মকারকের হাতে সমর্পণ করিয়া নিশ্চিন্ত থাকার নীতিকে কোরআনে সমর্থন দেওয়া হয় নাই। এই নীতিকে উপেক্ষা করিয়া চলার ফলে আমাদের জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলিতে অনেক সময় যে শিথিলতা, বিশৃঙ্খলা ও অনাচারের প্রাদুর্ভাব ঘটিয়া থাকে, ভুক্তভোগীরা তাহা বিশেষভাবে অবগত আছেন।

যে অঞ্চল হইতে জাকাত সংগ্রহ করা হইবে, তাহা সেই অঞ্চলের হকদার বা ন্যায্য প্রাপকদিগের মধ্যেই বন্টন করিয়া দেওয়া হইবে- ইহাই সাধারণ নিয়ম। কিন্তু মিল্লাতের মঙ্গলের জন্য আবশ্যক হইলে সেই বিশেষ অবস্থায় ইহার ব্যতিক্রমও ঘটিতে পারে। মোহাজেরগণের পুনর্বাসনের জন্য হজরত রছুলে করিম মফস্বলের কোন কোন অঞ্চলের জাকাতের মাল মদীনায় আনাইয়া নিয়াছিলেন, হাদিছে ইহার যথেষ্ট প্রমাণ বিদ্যমান আছে। “মোহাজেরদিগণের জন্য বিশেষ আবশ্যক না হইলে আমি এই ব্যবস্থা অবলম্বন করিতাম না।”- হজরতের এই উক্তিও প্রাসঙ্গিক বর্ণনায় মওজুদ আছে। ফলতঃ প্রথমটি হইতেছে আদর্শ এবং দ্বিতীয়টি হইতেছে জরুরী অবস্থা সাময়িক ব্যতিক্রম। মিল্লাতের জীবনে এই ব্যতিক্রমের দরকার সমসময়ই উপস্থিত হইতে পারে। মনে করুন, কোন অঞ্চলে জাকাত দেওয়ার মত মুছলমানের সংখ্যা অন্য অঞ্চলের তুলনায় অনেক বেশী এবং জাকাত নেওয়ার মত গরীব লোকের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত অনেক কম। ইহার বিপরীত কোন অঞ্চলে জাকাত দেওয়ার মত অবস্থাপন্ন মুছলমানের সংখ্যা খুব কম অথচ জাকাত পাওয়ার মত গরীব মুছলমানের সংখ্যা অনেক বেশী। এখানে মূলনীতির ব্যতিক্রম করিয়া প্রথম অঞ্চলের উদ্বৃত্ত জাকাত দ্বিতীয় অঞ্চলে বন্টন করিয়া দেওয়াই সঙ্গত হইবে।

আট শ্রেণীর অংশ বিভাগ সম্বন্ধেও এই কথা। জাকাতের মাল এই আট শ্রেণীর বাহিরে কাহাকেও দেওয়া যাইতে পারিবে না, এইটাই হল এখানকার প্রধান কথা। মছজিদ বানান খুব বড় ছওয়াবের কাজ, দ্বীনি মাদ্রাছা প্রতিষ্ঠা করা খুবই দরকারী, ইহাতে কাহারো দুই মত থাকিতে পারে না। কিন্তু জাকাতের মাল এহেন পূণ্য কাজেও ব্যয় করা যাইতে পারিবে না।

এই মুলনীতির অনুসরণ করার পর দেখিতে হইবে যে, আট শ্রেণীর সবগুলি বর্ত্তমান আছে কিনা। যদি থাকে, তাহা হইলে প্রত্যেককে বায়তুল তহবিল হইতে [প্রত্যেক শ্রেণীর অভাবের অনুপাত অনুসারে] সাহায্য দিতে হইবে। আর যদি সবশ্রেণীর বর্ত্তমান না থাকে, তাহা হইলে বর্ত্তমান শ্রেণীগুলির মধ্যেই জাকাতের মাল বন্টন করিয়া দিতে হইবে। গোলাম আজাদ করার প্রশ্নই এখন আমাদের সম্মুখে নাই। সুতরাং সে শ্রেণীকে বাদ দিয়াই এখন হিসাব ধরিতে হইবে। মোআল্লফাতুল কুলুব শ্রেণীর অস্তিত্বও আর বিদ্যমান নাই বলিয়া আমাদের পূর্ববর্ত্তী আলেমরা মত প্রকাশ করিয়াছিলেন। বর্তমানে ঐ শ্রেণীর কোন সার্থকতা আছে কিনা, তাহা বিচার করিয়া দেখা দরকার। এছলামের শিক্ষা অনুসারে কাজ চালাইতে পারলে আমরা হয়তো পাঁচ বৎসরের মধ্যেই দেখিতে পাইব যে, কোন কোন অঞ্চলে করজদার মুছলমান একজনও নাই। তখন তাহাদিগকে বাদ দিয়াই হিসাব ধরিতে হইবে।

এই প্রসঙ্গে আর একটা দরকারী বিষয়ের উল্লেখ করা আবশ্যক মনে করিতেছি। অনেক সময় দেখা যায় যে, বহিরাগত ধনিক সম্প্রদায়ের লোকেরা নিজেদের জাকাতের অধিকাংশই নিজ নিজ দেশে পাঠাইয়া থাকেন। শরীয়তের নির্দ্দেশ অনুসারে ইহা অন্যায়। মালিকের বাসস্থান যেখানেই হউক না কেন, যে অঞ্চলে কাজ কারবার করার ফলে তাহার আয় হয়, সেই আয়ের উপর নির্দ্ধারিত জাকাত সেই অঞ্চলের দারিদ্রদিগের জন্য ব্যয় করিতে হইবে। ফেক্‌হর পরিভাষায় ইহাকে ‘মাকানুল মাল’ বলা হয়। মাকানুল-মাল বা যে স্থানে ধন উৎপন্ন হয় সেই ধনের যাকাত সেই স্থানের লোকদিগের মধ্যেই বন্টন করিতে হইবে। তাহা অন্যত্র চালান দেওয়া বৈধ বা জায়েজ হইবে না।

আর একটা অতি আবশ্যকীয় বিধান এই যে বায়তুলমাল তহবিলকে সরকারের সাধারণ তহবিল হইতে সর্ব্বদা সম্পূর্ণভাবে স্বতন্ত্র করিয়া রাখিতে হইবে। অর্থাৎ সরকারী খাজানায় তাহার হিসাব আলাহিদা ভাবে খুলিতে হইবে, সরকারী রেভিনিউ বিভাগের কোন কর্ম্মচারী তাহার উপর কর্তৃত্ব করিতে পারিবে না এবং সরকারের কোন নিজস্ব বরাদ্দ বায়তুল মাল তহবিলের কোন টাকা কোন অবস্থাতেই ব্যয় করা যাইতে পারিবে না। এমাম আবু ইউছুফ খলিফা হারুনর রশিদের জন্য “কেতাবুল-খেরাজ” নামক যে ঐতিহাসিক গ্রন্থ রচনা করিয়াছিলেন, তাহার বায়তুল-মাল সংক্রান্ত প্রসঙ্গে এমাম ছাহেব উপরোক্ত নির্দ্দেশগুলি দৃঢ়তার সহিত বর্ণনা করার পর বলিতেছেন- “কারণ কর বাবতে সরকারী তহবিলে যে অর্থ সঞ্চিত হয়, তাহা হইতেছে সকল শ্রেণীর মুছলমানদিগের সম্মিলিত আয়, আর জাকাত প্রাপ্য হইবে শুধু সেই সব মুছলমানের, আল্লাহ তাআলা নিজ কেতাবে যাহাদের উল্লেখ করিয়াছেন।” [কেতাবুল-খেরাজ ৪৬ পৃষ্ঠা]।

উপসংহার

“বায়তুল্‌ মাল তহবিল” তহবিল সম্বন্ধে এই প্রবন্ধে শুধু একটা মৌলিক নীতির আলোচনা করা হইয়াছে। আনুষঙ্গিক “মছলা-মাছায়েল” সম্বন্ধে কোন আলোচনা করা হয় নাই। এছলামী ধন-নীতির দিক দিয়া এই প্রবন্ধে একটা বিশেষ প্রসঙ্গের অবতারণা করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু পরে দেখা গেল যে, এই প্রবন্ধের মধ্যে তাহার আলোচনা করা সম্ভব হইবে না, এবং সঙ্গতও হইবে না। তাই প্রবন্ধের উপসংহারে পাঠকগণকে শুধু এইটুকু বলিয়া রাখিতেছি যে, জাকাত ফেৎরা প্রভৃতির আলোচনার মধ্য দিয়া এই প্রবন্ধে যে নৈতিক ও মৌলিক আদর্শের আভাস পাওয়া গিয়াছে, তাহা হইতেছে এছলামী ধন-নীতির একটা দিকের আংশিক পরিচয় মাত্র। এছলামী ধন-নীতির ethical, moral ও legal বিধিব্যবস্থাগুলি ইহা অপেক্ষা অনেক বেশী ব্যাপক ও অনেক বেশী গভীর। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে এগুলি এমন সরল, সহজ ও স্বাভাবিক যে, সেগুলি আয়ত্ত করার জন্য, হিগেল, মার্কস ও ইন্‌জিলসের যুক্তিবাদের ন্যায়, কাহাকেও থিউরী ও আইডিয়া প্রভিৃতির সৃষ্টিতত্ত্বের বা সেগুলির সন্ধি-সংঘর্ষের ঘূর্ণিপাকে পড়িয়া মানুষ সাধারণকে হাবুডুবু খাইয়া মরিতে হইতেছে না। এছলামী ধন-নীতির আর একটা অতুলনীয় বৈশিষ্ট্য এই যে, বাস্তব ক্ষেত্রের দীর্ঘকাল-ব্যাপী ব্যবহারে সেগুলির পরীক্ষা হইয়া গিয়াছে এবং প্রত্যেক ক্ষেত্রেই তাহা সফল বলিয়া প্রতিপাদিত হইয়া গিয়াছে।

এছলামী ধন নীতির সম্বন্ধে যথাযথ আলোচনা হওয়া আজ যে বিশেষভাবে দরকার হইয়া পড়িয়াছে তাহা বোধ হয় কাহাকেও বলিয়া দিতে হইবে না। কিন্তু চরম দুঃখের বিষয় এই যে, দেশে ইহার উদ্যোগে আয়োজনের কোন চিহ্নই এ পর্যন্ত দেখিতে পাওয়া যায় নাই। কাজেই নিজের শক্তি-সামর্থ্য অনুসারে ব্যক্তিগতভাবে চেষ্টা আরম্ভ করা ব্যতীত উপায়ান্তর দেখিতেছি না।

(সংক্ষেপিত)

সূত্রঃ সাহিত্য ত্রৈমাসিক “প্রেক্ষণ”, মাওলানা আকরম খাঁ স্মরণ, জুলাই-সেপ্টেম্বর-২০০৫