তকী উসমানী
বিচারপতি মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী (জন্ম: ১৯৪৩, ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহারানপুর জেলার দেওবন্দ নামক স্থানে) পাকিস্তানের একজন প্রখ্যাত ইসলামী ব্যক্তিত্ব। তিনি হাদীস, ইসলামী ফিকহ, তাসাউফ ও অর্থনীতিতে বিশেষজ্ঞ। তিনি বর্তমানে ইসলামী অর্থনীতিতে সক্রিয় ব্যক্তিদের অন্যতম। তিনি ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শরীয়াহ আদালতের এবং ১৯৮২ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের শরীয়াহ আপিল বেঞ্চের বিচারক ছিলেন। তিনি বিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ “মাআরিফুল কোরআন”এর রচয়িতা মুফতি শফী উসমানীর সন্তান । বর্তমানে তিনি দারুল উলুম করাচীতে সহীহ বুখারী, ফিকহ এবং ইসলামী অর্থনীতির দরস দেন।
পরিবারে মায়ের কাছেই তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়। মার কাছেই তিনি উর্দু ও ফার্সি ভাষার প্রাথমিক পাঠ গ্রহণ করেন। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে আট বছর বয়সে তিনি দারুল উলুম করাচিতে ভর্তি হন। ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি এই প্রতিষ্ঠান থেকেই দরসে নেযামি সিলেবাসের সর্বোচ্চ স্তর দাওরা হাদিস সমাপন করেন। দাওরা হাদিসের কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় তিনি সর্বকালের সেরা নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি তাঁর পিতা মুফতি শফী উসমানীর তত্ত্বাবধানে ইসলামী ফিকহে উচ্চতর শিক্ষা অর্জন করেন। ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি দারুল উলুম করাচী থেকে ফিক্হ ও ফতোয়ার ওপর তাখাস্সুস (পি.এইচ.ডির সমমানের ডিগ্রি) সম্পন্ন করেন। ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি এবং রাজনীতি বিজ্ঞানে বি.কম এবং ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এল.এল.বি পাশ করেন। এছাড়া তিনি পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি ভাষা ও সাহিত্যে এম.এ ডিগ্রিও অর্জন করেন। তিনি শায়খ হাসান মাশাত, মুফতী মুহাম্মদ শফী উসমানী, মাওলানা ইদ্রীস কান্দলভী, মুফতী রশীদ আহমাদ লুধিয়ানভী এবং শায়খুল হাদীস মুহাম্মদ যাকারিয়া কান্ধলভীর কাছ থেকে হাদীস বর্ণনার ইজাযত (অনুমতি) গ্রহণ করেন।
১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে দাওরা হাদিস সমাপনের পর থেকেই তিনি দারুল উলুম করাচিতে অধ্যাপনা করে আসছেন। ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০০২ খ্রিষ্টাব্দের মে মাস পর্যন্ত তিনি পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের শরিয়া এ্যাপ্লাইট বেঞ্চের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। “মিজান ব্যাংক” প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পাকিস্তানে সর্বপ্রথম তিনিই ইসলামী ব্যাংকিং চালু করেন। প্রতি সপ্তাহের রবিবার তিনি করাচীর দারুল উলুম মাদরাসায় তাযকিয়াহ তথা আত্মশুদ্ধি সম্পর্কে বয়ান করেন। ১৯৭০ সালে প্রেসিডেন্ট যুলফিকার আলী ভুট্টোর আমলে পাকিস্তান ন্যাশনাল এ্যাসেম্বলি কর্তৃক কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করার ব্যাপারে আলিমদের মধ্য হতে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
জেনারেল জিয়াউল হকের শাসনামলে হদ্দ,ক্বিসাস এবং দিয়ত সম্পর্কিত আইন প্রণয়নে তিনি অগ্রবর্তি ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬৭ সাল থেকে তিনি উর্দূ মাসিক পত্রিকা আল-বালাগ এবং ১৯৯০ সাল থেকে ইংরেজি মাসিক পত্রিকা আল-বালাগ ইন্টারন্যাশনালের প্রধান সম্পাদক পদে আছেন। ইসলামী ব্যাংকিং ও অর্থনীতি সম্পর্কে তিনি বিভিন্ন পত্রিকা ও সাময়িকীতে বহু প্রবন্ধ লিখেছেন। আরবী, ইংরেজি ও উর্দুভাষায় তার রচিত বইয়ের সংখ্যা ৬০ এরও অধিক। বাংলাসহ বিশ্বের প্রায় ৭০টি ভাষায় তাঁর বই অনুদিত হয়েছে।
তিনি দেশি-বিদেশি অনেক সংগঠনের ও সংস্থার বিভিন্ন দায়িত্বে ছিলেন এবং এখনও আছেন। এদের মাঝে, দারুল উলূম করাচির শায়খুল হাদিস ও নায়েবে মুহতামিম, চেয়্যারম্যন, আন্তর্জাতিক স্ট্যার্ন্ডাড শরীয়াহ কাউন্সিল, ইসলামিক অর্থনৈতিক একাউন্টিং ও পরিদর্শন সংস্থা, বাহরাইন, স্থায়ী সদস্য, আন্তর্জাতিক ফিকহ একাডেমি , জেদ্দা ( ও আই সির অঙ্গপ্রতিষ্ঠান), চেয়্যারম্যন, সেন্টার ফর ইসলামিক ইকোনোমিকস, পাকিস্তান (১৯৯১ থেকে), তাকী উসমানী আন্তর্জাতিক ফিকহ একাডেমি (ওআইসির একটি শাখা সংস্থা) এর একজন স্থায়ী সদস্য। তিনি ৯ বছর তিনি আন্তর্জাতিক ফিকহ একাডেমির ভাইস চেয়ারম্যানও ছিলেন। ।
২০০৪ সালের মার্চ মাসে মাওলানা তাকী উসমানীকে দুবাইয়ে আন্তর্জাতিক ইসলামী অর্থনীতি সংস্থার International Islamic Finance Forum (IIFF) বার্ষিক অনূষ্ঠানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রি ইসলামী অর্থনীতিতে তাঁর অবদান ও অর্জনের কারণে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করে।
বাংলায় অনুদিত বইয়ের মাঝে অন্যতমঃ হযরত থানবী [রহ.] এর রাজনৈতিক চিন্তাধারা, আধুনিক কিছু ব্যবসা ও তাঁর শরয়ী বিধান, আল কুরআনের জ্ঞান-বিজ্ঞান, আসুন সংশোধন হই, ইসলাম ও আধুনিক অর্থব্যবস্থা, ইসলাম ও আধুনিক অর্থনীতি ও ব্যবসায় নীতি, ইতিহাসের কাঠগড়ায় হযরত মু’আবিয়া রা., আপন ঘর বাঁচান, ইসলাম ও আধুনিক অর্থব্যবস্থা সিরিজ (১-৮), ইসলাম ও আধুনিকতা, ইসলাম ও আমাদের জীবন, ইসলাম ও রাজনীতি, ইসলামী ফিক্বহের আলোকে সুদবিহীন ব্যাংকিং, ইসলামী ব্যাংকিং ও অর্থায়ন পদ্ধতিঃ সমস্যা ও সমাধান, ইসলাহি গল্প (২ খন্ডে), ইসলাহী মাজালিস (মোট ৬ খন্ড), এলেম এবং উলামাদের ফযীলত, গ্রন্থ পর্যালোচনা, কওমী মাদসারার নেসাব ও নেযামঃ দরসে নেযামের কিতাবসমূহের পাঠদান পদ্ধতি, তাফসীরে তাকী উসমানী, দরসে তিরমিযী, দুনিয়াজোড়া বিস্ময়কর সফর, দুনিয়ার ওপারে, নির্বাচিত গল্প, ফতোয়ায়ে উসমানী, ফিকহি মাকালাত, বরেণ্যদের স্মৃতিচারণ, বর্তমান প্রেক্ষাপটে ফারেগীন ছাত্রদের দায়িত্ব ও কর্তব্য, সীরাতুন্নবী ও আমাদের যিন্দিগী, সমাজ সংশোধনের দিক নির্দেশনা, নামে মুসলমান কাজে খ্রিস্টান, সমাজ সংশোধনের দিক নির্দেশনা, মুফতি শফি রহ. এর শায়েখ ও আকাবির, পরকালের সম্বল সহজে নেকি অর্জন, ইত্যাদি অন্যতম। তাঁর বইয়ের লিস্ট পাবেন এখানে - http://www.wafilife.com/product-category/books/author/shaikul-islam-mufti-muhammad-taki-usmani/
শাইখের ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট - http://www.muftitaqiusmani.com/ (উর্দূ, আরবী এবং ইংরেজিতে)