পাক-ভারতে ইসলামী সাংস্কৃতিক আন্দোলন
৭২০ বার পঠিত
দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ, দার্শনিক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও সমালোচক। তার নানা মরমি কবি হাসান রাজার বাড়িতে সুনামগঞ্জে ১৯০৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ছিলেন ভাষা আন্দোলনের একজন বড় সমর্থক।
তিনি সিলেটের রারিচাঁদ কলেজ থেকে বিএ এবং ১৯৪৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে এমএ ডিগ্রী অর্জন করেন। সুনামগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ হয়ে চাকরিতে যোগদান করেন। এরপর ঢাকার আবুজর গিফারীতে অধ্যক্ষ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন এবং ইসলাম শিক্ষা বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে পাঠদান করেন।
১৯৩৬ সালে মুহাম্মদ নূরুল হক ও অন্যান্যদের ঐকান্তিক সহযোগিতায় তিনি সিলেটে ‘কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ' গঠন করেন। দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ ১৯৪৯ সালে তমদ্দুন মজলিসের সভাপতি নির্বাচিত হন। তখন থেকে আজীবন মজলিসের সুদিন-দুর্দিনে সভাপতি ছিলেন।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মিছিল দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফের বাসা থেকেই সর্বপ্রথম বের হতো এবং সমস্ত শহর প্রদক্ষিণ করে আবার তাঁর বাসাতেই ফিরে আসতো। ভাষা আন্দোলনের জোর সমর্তনে তাঁর সম্পাদিত পত্রিকা নওবেলাল এ জোর প্রতিবাদ গড়ে তুলেন। এজন্য অনেক কাঠখড় পোহাতে হয় তাঁকে, তবুও তিনি সেই আন্দোলন থেকে পিছিয়ে আসেননি।
তিনি আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সমর্থক হয়ে আসামে মুসলিম অভিবাসীদের উপর জুলুমের প্রতিবাদে মুসলিম লীগে যোগ দেন এবং পরবর্তীতে আসাম প্রাদেশিক কমিটিতে নির্বাচিত হন। কিছুদিনের জন্য তিনি পাকিস্তান দার্শনিক কংগ্রেসের সদস্য এবং কোষাধ্যক্ষও ছিলেন। ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত বাংলাদেশ দার্শনিক এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছিলেন তিনি।
১৯৫৮ সালে দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ ড. হাসান জামান ও তৎকালীন ফ্রাংকলিন পাবলিকেশনের পরিচালক এটিএম আবদুল মতিন, মাওলানা মহিউদ্দীন খান প্রমুখের সাথে মিলে দারুল উলুম ইসলামিক একাডেমী প্রতিষ্ঠা করেন। আবুল হাশিম এর প্রথম পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হন। ইসলামিক একাডেমী ঢাকা নামে অভিহিত এ প্রতিষ্ঠানটিই বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ’ নাম নিয়ে কাজ করে চলেছে।
১৯৫৮ সালে বাংলা একাডেমীর কাউন্সিলর এবং ১৯৬৬ সালে বিজাতীয় সংস্কৃতি বিরোধী আন্দোলনে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। তিনি নজরুল একাডেমী প্রতিষ্ঠায়ও সক্রিয় দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি সাহিত্য ও দর্শন বিষয়ে ৬৫টি গ্রন্থ রচনা করেছেন। এদের মধ্যে: তমদ্দুনের বিকাশ, সত্যের সৈনিক আবুজর, ইতিহাসের ধারা, নতুন সূর্য (গল্প গ্রন্থ), ব্যাকগ্রাউন্ড অব দি কালচার অব বেঙ্গল, জীবন সমস্যার সমাধানে ইসলাম, ফিলোসফী অব হিস্টোরি, সাইন্স এন্ড রেভেলিউশন, ইসলামী আন্দোলন যুগে যুগে, ইসলাম ও মানবতাবাদ, সন্ধানী দৃষ্টিতে ইসলাম, দর্শনের নানা প্রসঙ্গ, আজাদী আন্দোলনের তিন অধ্যায়, আমাদের জাতীয়তাবাদ, ইসলামিক মুভমেন্ট, ধর্ম ও দর্শন, নয়া জিন্দেগী (উপন্যাস), বিজ্ঞান ও দর্শন (৩ খন্ডে), সিলেটে ইসলাম প্রভৃতি ছাড়াও আরো কয়েকটি গ্রন্থ। এছাড়াও তার ৪০টিরও অধিক অপ্রকাশিত গ্রন্থ রয়েছে।
দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ সাহিত্য ও শিক্ষা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বিভিন্ন সময়ে পুরস্কার লাভ করেন। স্বাধীনতা পুরস্কার, নাসির উদ্দীন স্বর্ণপদক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন পুরস্কার, একুশে পদক-সহ অনেকগুলো সাহিত্য পুরষ্কারে ভূষিত হন। জাতীয় অধ্যাপকরূপে নিযুক্ত হন ১৯৯৩ সালে।
মারা যান ১৯৯৯ সালে এবং পারিবারিক কবরস্থানেই তাঁকে দাফন করা হয়।