মুসলিম এবং সাদাকা
যাকাতঃ ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভের ধারণাটা কী? আমরা প্রায়ই ভাবি যে এটা শুধু টাকাকে বুঝায়, কিন্তু গুরত্বপূর্ণ ব্যাপার হল দানশীলতা অনেক প্রকারের হতে পারে। আবূ মূসা আশ’আরি রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “প্রত্যেক মুসলিমের সাদকাহ করা জরুরী। লোকজন বলল, ‘যদি তার সাদকাহ করার মত কিছু না থাকে তাহলে?’ তিনি বললেন, ‘‘সে তার হাত দ্বারা কাজ করে (অর্থ উপার্জন করবে) অতঃপর তা থেকে সে নিজে উপকৃত হবে এবং সাদাকাও করবে। তারা বলল, “যদি সে তাও না পারে?” তিনি বললেন, ‘‘সে কোন অভাবী বিপন্ন মানুষের সাহায্য করবে। আবূ মূসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, “যদি সে তাও না পারে?” তিনি বললেন, ‘‘সে মানুষকে ভাল কাজের নির্দেশ দেবে। আবূ মূসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘যদি সে এটাও না পারে?’ তিনি বললেন, ‘‘সে (অপরের) ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকবে। কারণ, সেটাও হল সাদকাহস্বরূপ।” (সহীহ বুখারী, খণ্ডঃ ৮, অধ্যায়ঃ ৭৩, হাদিস ৫১)
এই হাদিস থেকে এটা পরিষ্কার যে স্বেচ্ছাশ্রম আমাদের দানের একটা বড় অংশ হতে পারে। তাই যে কোন ইস্যূতে শুধু টাকা দেয়ার পরিবর্তে নিজেই ওই কাজে যোগ দিচ্ছেন না কেন? প্রোডাক্টিভ মুসলিম স্টাইলে দান করুন!
আমি খুবই ব্যস্ত বর্তমান সময়ে আমাদের নানা ধরনের মনোযোগ বিনষ্টকারী জিনিস রয়েছে; টিভি, ইন্টারনেট, ভিডিও গেমস যা দীর্ঘমেয়াদে আমাদের কোন কাজে আসবে না। তাই আপনি আপনার প্রতি লক্ষ্য করুন; কিভাবে সপ্তাহব্যাপী আপনি আপনার সময়গুলো ব্যয় করছেন। আমি নিশ্চিত যে আপনি স্বেচ্ছাসেবার জন্য কিছু সময় বের করতে পারবেন।
দুটি ব্যাপার মাথায় রাখতে হবেঃ
• সরাসরি বা অনলাইনঃ আপনার জীবনের সাথে কোনটি খাপ খায়
• স্বল্প সময়ের নাকি দীর্ঘ সময়ের জন্যঃ দিন কিংবা মাস বা বছর- সিদ্ধান্ত নিন!
যে ৩টি কারণে আপনি নিজেকে স্বেচ্ছাসেবায় নিয়োজিত করবেনঃ
১। নিজের দ্বীনে বিনিয়োগ করুন কয়েক সেকেন্ডে কিছু টাকা দান করার চাইতে আপনার সময়টা দান করুন। আপনি যা দিচ্ছেন তার বিনিময় পাবেন।
২। যে পরিবর্তন আপনি দেখতে চান সেটি আপনি নিজ হাতে করুন বসে থাকবেন কেন? টাকা দান করার পর সেটি কি কাজে ব্যয় হল সেটি নিয়ে দুশ্চিন্তা করার চেয়ে নিজে করুন, রেজাল্ট দেখুন।
৩। সামাজিক কার্যকারিতা উঠুন এবং দেখিয়ে দিন একজন প্রডাক্টিভ মুসলিম কেমন হয়। (সামাজিক কার্যকারিতা নিয়ে আরো জানতে Productive Muslim Newsletter দেখুন। কিভাবে শুরু করবেন?
এতক্ষণে আপনি বুঝে গেছেন কেন স্বেচ্ছাসেবায় নিয়োজিত হওয়া উচিত। আপনি নিশ্চয় চিন্তা করছেন কিভাবে শুরু করবেন। এখানে কিছু টিপস দেয়া হল যাতে আপনি ঠিক পথেই চলতে পারেন।
১। নিজেকে জিজ্ঞেস করুনঃ আমি কোন ব্যাপারে বেশি আগ্রহী? এটা সম্ভবত সবচেয়ে জরুরী ধাপ। যেমনিভাবে আপনি দান করলে আপনার টাকা কোথায় যায় তা নিয়ে মাথা ঘামান তেমনিভাবে আপনি কোথায় সময় দিবেন তা নিয়েও চিন্তা করুন। আপনার স্বেচ্ছাসেবা তখনই বেশি ফল দিবে যখন আপনি ওই লক্ষ্যকে প্রকৃত অর্থেই অন্তরে ধারণ করবেন। বিভিন্ন সংগঠন উৎসাহী স্বেচ্ছাসেবী খুঁজে, গোমড়া মুখোদের না! যদি আপনার সন্তান থাকে তবে কেন আপনার পুরো পরিবারকেই যুক্ত করছেন না এবং একত্রে একটা প্রজেক্টে নিজেদের নিবেদিত করছেন না? এটা কেবল উদাহরণ দিয়ে শেখানো নয় বরং পারিবারিক বন্ধনকে আরো মজবুত করবে।
২। আমি কোন ব্যাপারে দক্ষ? যে বিষয়গুলোতে আপনার দক্ষতা আছে তার একটা তালিকা করুন। আপনার কাজের সর্বোচ্চ ফল পেতে আপনাকে জানতে হবে কোন বিষয়ে আপনি দক্ষ।
৩। সুযোগ খুঁজুন চমৎকার! আপনি আপনার কাজের ক্ষেত্র পেয়ে গেছেন। এখন প্রয়োজন দক্ষতা ও সুযোগের মেলবন্ধন।
স্থানীয় কাজে স্বেচ্ছাসেবা! যদি আপনি আপনার এলাকায় কিছু করতে চান তবে আপনি আশেপাশে খোঁজ নিতে পারেন। মসজিদে কাউকে জিজ্ঞেস করুন কিংবা ইন্টারনেট সার্চ করুন। কোন নির্দিষ্ট সংগঠনে আপনি স্বেচ্ছাসেবায় নিয়োজিত হতে চান? তবে তাদের ওয়েবসাইট চেক করুন।
অনলাইনে স্বেচ্ছাসেবা! স্বেচ্ছাসেবা শুরু করার জন্য এটা সবচেয়ে সহজ উপায়। যদি কোন নির্দিষ্ট সংগঠনে আপনি স্বেচ্ছাসেবায় নিয়োজিত হতে চান তবে তাদের ওয়েবসাইট চেক করুন। তবে সঠিক স্বেচ্ছাসেবার ক্ষেত্র খুঁজে পেতে আপনি www.onlinevolunteering.org চেক করতে পারেন। এটা একটি চমৎকার পোর্টাল যাতে আপনি আপনার সাথে যায় এমন কাজ পাবেন। আমার প্রথম প্রধান স্বেচ্ছাসেবার কাজ এখান থেকেই শুরু হয়েছিল তারপর আর পেছন ফিরে তাকাইনি।
বিদেশে স্বেচ্ছাসেবা! যদি আপনার অনেক সময় থাকে এবং কম জায়গায় দায়বদ্ধতা থাকে তবে এটি আপনার জন্য। যদি আপনি ওই দেশেই থাকেন তবে আশেপাশের কাউকে জিজ্ঞেস করুন। হোস্টেল, পর্যটনকেন্দ্রগুলো স্থানীয় ব্যাপারে আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
বিকল্প হল, যাওয়ার আগে খোঁজখবর নিয়ে যান এবং পৌঁছানোর পর কী কী করবেন তা ব্যবস্থা করুন। যাওয়ার আগে আপনি ওই সংগঠনের সাথে নিশ্চিত হয়ে নিন কী কী করতে হবে। কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন মাথায় রাখতে হবেঃ স্বেচ্ছাশ্রমের জন্য কি অর্থ প্রদান করতে হবে? (ব্যক্তিগতভাবে আমি অর্থ খরচের বিপক্ষে, অনেক সুযোগ আছে যেখানে অর্থ প্রদানের দরকার নেই)। থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা আছে কী? প্রতিটা সংগঠনই আলাদা তাই যাওয়ায় আগে ব্যাপারগুলো সমাধা করে যান।
ভাল লাগার অনুভূতি এটা খুব সহজ। পদক্ষেপগুলো অনুসরন করুন আর আপনি স্বেচ্ছাসেবায় নিয়োজিত হবার জন্য প্রস্তুত। যখনি আপনি স্বেচ্ছাসেবায় নিজেকে নিয়োজিত করবেন, অনুভব করবেন যে এটা টাকা দান করার চাইতে চমৎকার একটা ব্যাপার। মনে রাখবেন জীবনের সবচেয়ে সেরা ব্যাপারগুলো কিন্তু বিনামূল্যেই পাওয়া যায়। উপভোগ করুন!
আপনার উৎপাদনশীলতা কি স্বেচ্ছাসেবায় কাজে লাগান? চমৎকার কোন টিপস আছে কি স্বেচ্ছাসেবার জন্য? আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন।
সূত্রঃ ProductiveMuslim.com